প্রতিক্রিয়া
রায়ে সত্য ও সুন্দরের জয় হয়েছে
আজ আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। আপিল বিভাগের এই চূড়ান্ত রায়ের দিকে দেশে-বিদেশে কোটি কোটি মানুষের দৃষ্টি থাকে। সব পক্ষই দৃশ্যত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চায়। কিন্তু আসলেই কি তাই সম্ভব? সম্ভব নয়। এই বিচার প্রক্রিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। যা পক্ষে-বিপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এ রায় নিয়ে বিতর্ক তোলার সুযোগ নেই। যদিও এই রায় তাঁদের পক্ষে যাবে বলে মত দিয়েছিলেন সালাউদ্দিন কাদেরের আইনজীবী। পাল্টা যুক্তি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীও তুলে ধরেছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা ন্যায় ও অতি প্রয়োজন বলে যুক্তি পেশ করেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সেই রায় বহাল রেখেছেন। কয়েকদিন ধরে এ রায় নিয়ে বিদেশি একটি সংবাদমাধ্যমে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সাক্ষাতের গুঞ্জনে একধরনের সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল।
অবশেষে সেই প্রত্যাশিত রায় পেয়েছে নির্যাতিতরা। এতে করে একধরনের স্বস্তির বাতাস বইছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সাকা চৌধুরীর ভূমিকা ছিল ক্ষমার অযোগ্য। বিশেষ করে হত্যা, গণহত্যা, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন এবং তাদের দেশান্তরে বাধ্য করা ছিল তাঁর অন্যতম অপরাধ।
চটকদার, ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং অশালীন মন্তব্যের জন্য বারবার সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। মুখাবয়বে তাচ্ছিল্য, তীর্যক হাসি ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে কটূক্তি ছিল তাঁর অন্যতম নেশা। বিভিন্ন সময় আওয়ামী ও বিএনপি নেতাদের নিয়ে বেঁফাস মন্তব্য করে দৃষ্টিকাড়েন তিনি। আর তাঁর এ আচরণ কখনো সভ্য সমাজের জন্য কাম্য নয়।
এই রায়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো বাংলাদেশে কোনো মানবতাবিরোধীদের ঠাঁই নেই। অপরাধী যত বড়ই হোক, তিনি আইনের ঊর্ধ্বে নন। দেশের মানুষ যে স্বপ্ন দেখত; এ রায়ের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হলো। বিশেষ করে কলঙ্কের অধ্যায় শেষ করে সমৃদ্ধির পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল দেশ। এই রায়ের জন্য চট্টগ্রামের মানুষ দীর্ঘকাল অপেক্ষা করেছিল। এই রায়ে সত্য ও সুন্দরের জয় হয়েছে।