গ্রিস সংকট
গ্রিসের বার্তা
ফিদেল কাস্ত্রো তাঁর এক বিখ্যাত বক্তৃতায় সোভিয়েত-পতন পরবর্তী সংকট কীভাবে কিউবা কাটিয়ে উঠেছিল, তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেছিলেন। ’৫৯ সালের পয়লা জানুয়ারি একনায়ক বাতিস্তা সরকারের উচ্ছেদের পর ’৬০ সাল থেকে দেশটিকে মার্কিনিরা অবরোধের মাঝে ফেলে, ফলে নিজের পণ্য নিয়ে মুক্তভাবে বাণিজ্য করতে পারত না কিউবা। কিউবার একমাত্র বাণিজ্য সহযোগী ছিল সোভিয়েতবলয়। কিন্তু ’৯০-এ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর নিজের পণ্য বিক্রি কিংবা তেলসহ আমদানিপণ্য পাওয়ার বিষয়টি অচল হয়ে পড়ে। ২০০০ সালে হার্লেমে রিভারসাইড চার্চে ৮ সেপ্টেম্বর কিউবা সংহতি শোভাযাত্রায় কাস্ত্রো আগের ১০ বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন এভাবে :
‘এটুকু বলাই তো যথেষ্ট যে, আমাদের প্রতিদিনের নেওয়া ক্যালরির পরিমাণ কমবেশি ৩০০০ থেকে রাতারাতি ১৮০০ ক্যালরিতে এসে ঠেকেছিল। এখন এটা ২৪০০ ক্যালরি। কিন্তু এমনকি এটাও আমাদেরকে আমাদের কর্তব্যকর্ম থেকে বিরত রাখেনি। এই ১০ বছর ধরে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় নতুন ৩০ হাজার চিকিৎসক যুক্ত করেছি এবং আমরা একটা চিকিৎসাকেন্দ্র বা একটা বিদ্যালয় বা একটা শ্রেণিকক্ষও বন্ধ করিনি… (হাততালি)…আমাদের দেশ কখনোই তথাকথিত ওই সব অর্থনৈতিক শক পলিসিতে চলেনি যে নীতি সামাজিক নিরাপত্তা আর জরুরি রসদ থেকে বঞ্চিত করে। ... আমরা মোকাবিলা করেছি, কিন্তু ওই সব ব্যবস্থার একটাও ব্যবহার করতে হয়নি। আর এই গুরুতর কঠিন পরিস্থিতি অতিক্রম করার জন্য যা কিছু আমাদের বাস্তবায়ন করতে হয়েছে, জনগণের সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে।’
(কাস্ত্রোর এই বক্তৃতাটি পড়ুন http://www.cuba.cu/gobierno/discursos/2000/ing/f080900i.html)
দরিদ্র ও সম্পদহীনপ্রায় দেশের প্রধান কাস্ত্রো গর্ব করেই ওই বক্তৃতায় বলেছিলেন, তীব্র অর্থনৈতিক অবরোধের মাঝেও কী করে ধীরে ধীরে কিউবা সম্মিলিত চেষ্টাতেই শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সংস্কৃতি-মাতৃসেবায় নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতিতে বিন্দুমাত্র ছাড় না দিয়ে জনগণের সকল পর্যায়ে দেশের মোট সম্পদ আর চাহিদার হিসাব-নিকাশ, বণ্টনের উপায় নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে মাথাপিছু বরাদ্দ নির্ধারণ আর বিলাস পণ্যের ওপর কর বসিয়ে সংকটের সমাধান করেছিল। বলা যায় আদি গ্রিকসুলভ প্রত্যক্ষ-গণতন্ত্রেরই একটা রূপ তারা বাস্তবায়ন করেছিল কিউবাতে। ওই রকম একটা সংকটে সাত বছর বয়সী পর্যন্ত দেশের সকল শিশুর জন্য প্রতিদিন এক লিটার দুধের বরাদ্দে একটুও টান দেয়নি কিউবা, কাস্ত্রোর গর্ব করার অধিকার অবশ্যই আছে। তীব্র অবরোধ, বাড়তি দামে সকল পণ্য কিনতে এবং অল্প দামে নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হওয়া কিউবা অনেকগুলো বৈশ্বিক সূচকে যা অর্জন করেছে, তা মানবজাতির জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনীয়।
কাস্ত্রো যাকে বলে আগে থেকে কোনো কমিউনিস্ট ছিলেন না, যদিও বাতিস্তা সরকারের উচ্ছেদকামী আরো অনেকে মত-পথের সঙ্গে সঙ্গত কারণেই পরিচিত ছিলেন। বাতিস্তার উচ্ছেদের পর গণতান্ত্রিক এবং প্রতিবেশীসুলভ মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্কের আশায় তিনি ওই ১৯৫৯ সালের এপ্রিল মাসেই যুক্তরাষ্ট্র সফরও করেছিলেন। মার্কিনিরা বরং তাদের বৈশ্বিক সাম্রাজ্যে, বিশেষ করে ঘরের কাছে একটা গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক শক্তিকে সহ্য করতে, তাকে বিকশিত হতে দিতে প্রস্তুত ছিল না। ফলে তারা অবরোধ আরোপ করে। এই অবরোধের পরিণামেই কৌশলগত সুবিধা ও নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে কাস্ত্রোর সম্পর্ক দানা বাঁধতে থাকে। সংকট এবং তা মোকাবিলার পথ আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই কাস্ত্রো আর কিউবা নিজের গতি নির্ধারণ করে, আকাঙ্ক্ষার সাদৃশ্য আর তীব্রতা থেকে তার গতিমুখ নির্ধারিত হয়।
কাস্ত্রোর ওই বক্তৃতার বছরটিতেই, বক্তৃতার মাস কয়েক আগে ১৭ এপ্রিল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশিত হয়। সময়টা আরেকটা সংকটের জন্য বিখ্যাত। দক্ষিণ-এশীয় মুদ্রা ব্যবস্থার সংকট ওই বছর একটা বৈশ্বিক বিপদ ডেকে আনে। ২ জুলাই ১৯৯৭ সালে এটার বহিঃপ্রকাশ ঘটে প্রথম থাইল্যান্ডে, তারপর ছড়িয়ে পড়ে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ছিলেন জোসেফ স্টিগলিটজ। ওই সময়ে তাঁর লেখা ‘দি ইনসাইডার : হোয়াট আই লার্নড অ্যাট দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ক্রাইসিস’ বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়, বদরুদ্দীন উমর সম্পাদিত সংস্কৃতি পত্রিকার কাছাকাছি সময়ে সেটি অনুবাদ আকারে ছাপাও হয়েছিল। ওই রচনায় আইএমএফের নীতি কীভাবে বিশ্বব্যাপী একের পর এক দেশকে সংকটাপন্ন করেছে, স্টিগলিটজ সেই বিষয়ে খোলাখুলি বলেন। তাঁর বক্তব্যকে সবাই গুরুত্ব দিতে বাধ্য হন, কারণ তিনি ছিলেন ভেতরেরই একজন। স্টিগলিটজ দেখিয়ে দেন, একই শকথেরাপির ব্যবস্থাপত্র আইএমএফ চাপিয়ে দিয়েছে সব অসুখের চিকিৎসায় : বিরাষ্ট্রীয়করণ করো, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণের সক খাত প্রত্যাহার করো, মুদ্রানীতি উন্মুক্ত করো। এমনকি এই লেখাতে তিনি এমন উদাহরণও দিয়েছেন আইএমএফের তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের, যাঁরা একটি দেশের জন্য তৈরি করা পরামর্শ-প্রতিবেদন ভিন্ন একটি দেশের জন্য হুবহু চালিয়ে দিয়েছিল। কপিপেস্টের ভুলে বিষয়টা ধরা পড়ে শেষমেশ।
(স্টিগলিটজ-এর মূল লেখাটি পড়ুন এখানে http://www.globalexchange.org/resources/wbimf/stiglitz)
ওই অর্থনৈতিক সংকটে ভঙ্গুর অর্থনীতি ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার মতো শিল্পোন্নত দেশ অজস্র বেকারে ছেয়ে গিয়েছিল। সংকট কাটানোর জন্য তাদের যে বিশাল কৃচ্ছ্রসাধনের ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়, তা প্রায় এক দশক ধরে মানুষের জীবনমানকে নিচের দিকে নামিয়ে দেয়। ইন্দোনেশিয়ায় মৌলবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী অনেকগুলো আন্দোলন শুরু হয় এই মন্দার পর। কোরিয়ার মতো সচ্ছল দেশেও ছোটখাটো অপরাধ থেকে শুরু করে খুন-জখম, দাঙ্গার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছিল, অসুখে ভুগে মৃত্যুহারও বেড়েছিল। নিম্ন আয়ের মানুষের চিকিৎসাসেবা গ্রহণ ও ওষুধের প্রাপ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, অপুষ্টির কারণে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর পরিমাণ ৪০-৭০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
(দক্ষিণ কোরিয়াকে কেন্দ্রে রেখে শিল্পোন্নত একটা দেশে স্বাস্থ্য ও পরিচালিত এমন একটি গবেষণা এখানে পাওয়া যাবে Impact of economic crisis on cause-specific mortality in South Korea http://ije.oxfordjournals.org/content/34/6/1291.full#xref-ref-45-1)
কেবল দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে মানুষকে বিপর্যস্ত করে আর মার্কিন-ইউরোপীয় পুঁজি ব্যবসায়ীদের তড়িৎ মুনাফা জুগিয়ে দক্ষিণ এশীয় সেই সংকট থেমে থাকেনি। এর ধাক্কায় তেলের দাম কমে ওপেকের আয় কমে গিয়েছিল, রাশিয়ার অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছিল, তার প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লগ্নিকারীরা বিপুল লোকসানের শিকার হলে দেউলিয়া হয় বিখ্যাত Long-Term Capital Management L.P. (LTCM) কোম্পানির পতন ঘটে, এরপরই শুরু হয় ২০০০-পরবর্তী মার্কিন মন্দার যুগ। যে কোনো মন্দার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো এর ঝুঁকিটা জাতীয়ভাবে সবাইকে ভোগ করতে হয়। কিন্তু যেসব কারণে মন্দা উঁকি দেয় কিংবা ত্বরান্বিত হয়, সেগুলোর সুফল একলা ভোগ করে সমাজের ধরাছোঁয়ার বাইরের অংশটি। এমনকি এর পরবর্তীকালের অনেকগুলো ধস ও বেইল আউটের পর্বে আমরা দেখেছি সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, বয়স্ক অবসরভোগী আর শ্রমিক, শিক্ষার্থী এবং নারীদের ওপর দিয়ে ভোগান্তির পুরোটা চাপিয়ে দেওয়া হলেও ধূর্ত লগ্নিকারীরা বিপুল মুনাফা তুলে নিয়েছে নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া আর বেল আউটের বন্দোবস্তে। ২০০৮ সালে লেহম্যান ব্রাদার্স দেউলিয়া হলে লাখ লাখ মার্কিন বিনিয়োগকারী পথে বসেন। ক্যালিফোর্নিয়ার লিবারেল সিনেটর ওয়াক্সম্যান সিনেটের একটা তদারকি পর্ষদের সভায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড ফুল্ডের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে চান :
‘তোমার প্রতিষ্ঠান এখন দেউলিয়া আর আমাদের রাষ্ট্র একটা সংকটে পড়েছে, তুমি ৪৮০ মিলিয়ন ডলার নিজের জন্য পেয়েছো। আমার একটা খুব মৌলিক প্রশ্ন আছে : এটা কি ন্যায্য?’
ফুল্ড এরপর ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন, কোম্পানি যখন ভালো করছিল, আমরাও ভালো ছিলাম। কোম্পানি যখন ভালো করেনি, আমরাও ভালো থাকিনি।
ওয়াক্সম্যান দ্বিমত জানালেন, ‘জনাব ফুল্ড, কথাটা মনে হয় ঠিক নয়। কোম্পানি যখন ভালো করছিল, আপনি আরো বেশি ভালো করছিলেন। কোম্পানি যখন ভালো করছিল না, তখনো আপনি ভালো করছিলেন। আর এখন এই কোম্পানির যাঁরা মালিক ছিলেন, সেই সাধারণ অংশীদারদের কিচ্ছু নেই। তাদেরকে মুছে ফেলা হয়েছে।’
(Lehman Brothers chief executive grilled by Congress over compensation www.theguardian.com/business/2008/oct/06/creditcrunch.lehmanbrothers ইউটিউবে দেখুন)
বেল আউটের পুরো দায়টা আদতে তাদেরই নিতে হয়—সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা ফ্রান্স যেই হোক না কেন—যে জনগণ এই পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে কম দায়ী।
গ্রিসের অর্থনীতি কোরিয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের তুলনায় বহুগুণ ভঙ্গুর। বলা উচিত দক্ষিণ কোরিয়া ওই সংকটে পড়েছিল শুধুমাত্র আইএমএফের ভুলনীতির কারণে, যেটা স্টিগলিজড আলোচনা করেছেন, এবং দক্ষিণ এশিয়াব্যাপী ওই সংকটের প্রধান সুবিধাভোগী ছিলেন জর্জ সরোজ, তার সঙ্গে আরো কিছু মুদ্রা ব্যবসায়ী ও স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারী। তীব্র অর্থনৈতিক সংকট কোরিয়া কয়েক বছরেই সামলে নিতে পারলেও (যেটা বহু বছরেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি ইন্দোনেশিয়া, কিছুটা দেরিতে পেরেছে থাইল্যান্ড) গ্রিস একের পর এক এমন বিপর্যয়ের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। এবং এক রামে রক্ষা নাই, সুগ্রীব দোসর, তাদের ভাগ্যে উপরি জুটেছে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ইউরোপীয় কমিশন। ফলে ২০০০ পরবর্তী একের পর এক সংকটে পড়ে মার্কিনিরা পুঁজিবাদের উল্টোপিঠের যতটুকু দেখেছে, কিংবা যুক্তরাজ্যে এই কৃচ্ছ্রসাধনের দরুন গত এক দশকে যে বিক্ষোভের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার চেয়ে বহুগুণ ভয়াবহ চেহারা নিয়ে সংকট হাজির হয়েছে গ্রিকদের সামনে।
গ্রিসের পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী? জার্মান নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক লগ্নিকারবারি ও তাদের ভক্তদের ধূর্ত যুক্তির সূচনাটা এভাবেই হয় : ঋণ করার সময় তো মনে ছিল না!
গ্রিসের এই রায়ের অন্যতম প্রধান তাৎপর্য হলো এখানেই, ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো জনগণ ঋণের দায়ে অপমাণিত হতে অস্বীকার করার সাহস দেখিয়েছে। গ্রিসের নেওয়া ঋণগুলো আসলে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়েছে, সেই প্রশ্নগুলোর অনুসন্ধান করাটা খুব জরুরি।
গ্রিসের বর্তমান সংকট শুরু হয় ২০০৯-এর শেষ দিকে। ইউরোতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে এর মুদ্রামান যায় বেড়ে, ফলে উৎপন্ন সব কিছুরও দাম বাড়ে, কাগজে-কলমে জনগণের গড় আয়ও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ইউরোর উচ্চ মুদ্রামানের কারণে এর শিল্পকারখানাগুলো প্রতিযোগিতার যোগ্যতা হারাতে থাকে। আমদানি-রফতানির ঘাটতির কারণে এর দুর্বল অর্থনীতির ওপর বিপুল চাপ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সরকারি মহলের খরচের প্রবণতার তীব্রতা বোঝা যাবে ২০০৪ সালের অলিম্পিক আয়োজনের বাড়বাড়ন্তে। অনেকেই একে গ্রিসের আজকের সংকটের সঙ্গে সম্পর্কিত করছেন, যদিও ৩০০ বিলিয়নের তুলনায় নয় বিলিয়ন খুব সামান্য অর্থ। কিন্তু এর মধ্যে সেই প্রকল্প বানানোর প্রবণতাই দেখা যায়, অত্যাধুনিক মাঠই শুধু না, হোটেল, রাস্তার আধুনিকায়নেও বিপুল ব্যয় হয়। এর অধিকাংশই বানিয়েছিল জার্মান ও ফরাসিরা। পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী অলিম্পিকের ২২টি আয়োজনস্থলের ২১টিই বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত। এই সময়গুলোতে আজকের মহাজনরাই দুই হাতে তাকে ঋণ দেয়। কেননা, লগ্নি না করে লগ্নিকারীদের উপায় নেই, তারাও তাই দুর্নীতিপরায়ণ শাসকদের বেশি বেশি পছন্দ করে।
গ্রিসের ঋণ কত? ৩২৩ বিলিয়ন ইউরো তার বর্তমান ধার। গত নির্বাচনের আগে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত সাতটা কৃচ্ছ্রসাধনের কর্মসূচি গ্রিক সংসদে পাস করা হয়েছে, এর প্রতিটাতে বেতন কমানো, কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি, ছাঁটাই, অবসর ভাতা কমানোসহ জনগণের তুলনামূলক দরিদ্রতর অংশের ওপর ভয়াবহ সব বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্দর, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগসহ জাতীয় সম্পদকে বিরাষ্ট্রীয়করণের তোড়জোড় চলেছে। বিনিময়ে ত্রয়ী তাকে দিয়েছে বেল আউট আর ঋণ নবায়নের, নতুন ঋণ পাওয়ার, সেই ঋণের বড় অংশ দিয়ে পুরনো ঋণ শোধের বন্দোবস্ত। ঋণ কি কমেছে?
না। ২০১০ সাল থেকে আইএমএফ, ইউরোপীয়য় সরকার ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রিসকে ঋণ দিয়েছে ২৫১ বিলিয়ন ইউরো। একই সময়ে ২৩২ ইউরো ব্যয় করা হয়েছে ঋণ শোধ, গ্রিক ব্যাংককে বেলআউট এবং বৈশ্বিক ফাটকাবাজারিদের তুষ্ট করতে। এর অর্থ হলো, ১০ ভাগেরও কম অর্থ গ্রিক নাগরিকদের জন্য ব্যয় হয়েছে। এভাবে ঋণের পরিমাণ কেবল বেড়েছে, কিন্তু ঋণ শোধ হয়নি, দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতেও তা ব্যয় হয়নি।
(Greece crisis: How has Greece spent its money and who does it still owe €242.8bn to?
www.independent.co.uk/news/business/news/greece-crisis-how-has-greece-sp... )
এরই ফলটা দেখিয়েছেন পল ক্রুগম্যান। ২০০৯ সালে কৃচ্ছ্রসাধনের কর্মসূচির আগে গ্রিসের ঋণ ছিল মোট জাতীয় উৎপাদনের ১২৬ ভাগ, মানুষের জীবনকে এভাবে দুর্বিষহ করা ঋণ শোধের বন্দোবস্তের পর আজকে গ্রিসের ঋণ তার মোট জাতীয় উৎপাদনের ১৭৭ ভাগ! (Paul krugman, Debt Deflation in Greece krugman.blogs.nytimes.com/2015/07/07/debt-deflation-in-greece/) গ্রিক জাতির এমন মর্মান্তিক রক্তক্ষরণের পরও গ্রিসের ঋণ ও মোট জাতীয় উৎপাদনের অনুপাতের চেহারাটা গত কয়ক বছর ধরে এমন :
(http://qz.com/197020/ridiculously-investors-are-about-to-let-greece-borr...)
বিশেষ করে বয়স্ক-শিশু-নারীদের জন্য এই্ কর্মসূচিগুলো একের পর এক আঘাত নিয়ে আসে। এই পুরোটা সময়ে গ্রিক জনসাধারণ বিক্ষোভ আর প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশজুড়ে, সংঘর্ষে মৃত্যুবরণ করেছেন। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রাণরসায়নবিদ আত্মহত্যা করেন সংসদ ভবনের কাছেই। নাগরিকদের আন্দোলনও জমাটবদ্ধ হতে থাকে। প্রতিদিনের বিক্ষোভ-দাঙ্গা-সংঘর্ষে তারা ত্রয়ী শোষক ও সরকারের ভূমিকার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ঐক্যবদ্ধ হয়। পুরোনো অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আর মতাদর্শ নিজেদের দেউলিয়া প্রমাণ করেছে, জনগণের লড়াই এর মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল, তাদের নেতৃত্ব।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যানসহ অনেক অর্থনীতিবিদই মনে করেন, এই মুহূর্তে শোধ করা না গেলেও গ্রিসের এই ঋণ পরিশোধের অযোগ্য নয়। মুশকিল হলো এই ঋণ কোন পদ্ধতিতে শোধ করা হবে, সেটা নিয়ে একমত হওয়া কঠিন। দাতারা চাইছেন কৃচ্ছ্রসাধনের আরো কঠোর শর্ত কায়েম করতে, সরকার চাইছে ভিন্নপথ ধরতে। এর আগের সরকারগুলোর সঙ্গে এই সমস্যা হয়নি দাতাদের, কারণ জনগণের বিপুল বিক্ষোভ সত্ত্বেও তাঁরা যথাসম্ভব অনুগত ভূমিকা পালন করেছেন। ফলে ঋণ নবায়ন, নতুন ঋণ প্রদান করে সেই অর্থ দিয়ে পুরোনো ঋণ শোধ এবং কিছু ঋণ তামাদি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া তাদের সঙ্গে চলছিল। এর সঙ্গে তামাদি করার আগে যথাসম্ভব গ্রিসের ঋণ শোধ করার সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য, মানে দরিদ্রতম ও বিপদগ্রস্ততম মানুষটার কাছ থেকেও যথাসম্ভব নিংড়ে নেওয়ার জন্য অবসরভাতাসহ আর সব খাতে রাষ্ট্রীয় ব্যয় কমানো হচ্ছিল।
বর্তমান সংকট মোকাবিলার পথ নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের এই মন্তব্যটি কিছুটা সংক্ষেপে তুলে ধরছি আলোচনার সুবিধার্থে :
‘জার্মানিকে করদাতাদের কর পরিশোধ নিয়ে কোনো সমসায় ভুগতে হয় না, গ্রিসে এটাই একটা গুরুতর সমস্যা। দ্বিতীয়ত, গ্রিসের বেকারত্বের হার থেকে বোঝা যাবে কেন গ্রিস নিজের ভবিষ্যৎকে নিজের হাতে নিতে চায়। পৃথিবীর ইতিহাসের নজিরতম বেকারত্বের এই দেশে প্রতি দুজনে একজন তরুণ বেকার, এটা গ্রিক অর্থনীতিকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রাহুগ্রস্ত করবে। ফলে গ্রিক নেতারা একটা ভিন্ন পথ নিলেন।
‘সাম্প্রতিকতম গণভোট প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি সিপরাস ডেকেছিলেন ইউরোপের সঙ্গে আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পরই। ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইএমএফ—ত্রয়ী গ্রিসকে কার্যকর থাকার যে অর্থ দরকার তা দিচ্ছিল এবং দিচ্ছিল ত্রয়ীর ধার শোধ করার জন্যও। সুনির্দিষ্টভাবে এইএমএফ চাপ দিচ্ছিল গ্রিস যেন তার অবসরভাতা গড় জাতীয় আয়ের এক ভাগ ছেঁটে ফেলে, গ্রিস জবাবে জানায় যে তারা অর্ধেক ছাঁটতে রাজি আছে, বাকি অর্থটা ব্যবসার ওপর কর বসিয়ে পূরণ করতে চায়। তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে যখন আর পারল না, সিপরাস গণভোটের ডাক দিলেন।’
(7 key things to know about Greece’s debt crisis and what happensNext www.washingtonpost.com/blogs/wonkblog/wp/2015/07/05/as-greece-votes-here...)
ঋণ যে করেই হোক পরিশোধ করতেই হবে, এটা সবাই জানে। যদিও এই ঋণের বহুগুণ প্রথম থেকেই জার্মানি আর ফ্রান্সেই ফেরত গিয়েছে, নানা প্রকল্প ব্যয় বাবদ, ঋণের সুদ বাবদ। গ্রিসের জনগণ সামান্যই উপকৃত হয়েছেন এর থেকে। সিরজা দলও জানে যে এই ঋণ থেকে নিস্তার নেই। কিন্তু ঋণ শোধের নামে গ্রিসের বর্তমানের ওপর বিভীষিকার রাজত্ব চালিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে, ভবিষ্যৎটাও বিসর্জন দেওয়ার স্থায়ী বন্দোবস্তে তাঁরা আপত্তি করেছেন। তাঁরা দুর্নীতি কমিয়ে, ধনীদের ওপর করারোপ করে এবং রাষ্ট্রীয় নানা উদ্যোগের পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর পথে যেতে চান। গ্রিকদের দুর্নীতি নিয়ে নানা কথাবার্তা বলে এলেও ত্রয়ীর মূল লক্ষ্য আসলে তার অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ দখলে রাখা। ফলে তারা গ্রিকদের নিয়ন্ত্রণ সহজে গ্রিকদের হাতে নিতে দেবে না। সংকটের অর্থনৈতিক দিকটা এখানে।
গ্রিসের মহাজনদের দেশওয়ারি চিত্র, সবুজ অংশটা আদি ঋণগুলো, যেগুলো নেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন দেশের ব্যাংক থেকে। নীল অংশটা ইইউ বেল আউটের ভাগ। খয়েরি অংশটাও নানা সময়ে নেওয়া বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ। সবুজের সঙ্গে নীল ও খয়েরির অনুপাতে বিপুল তারতম্য থেকে অনুমান করা যাবে মূলঋণের কত বেশি ছাড়িয়ে গেছে সুদ এবং অন্যান্য দায়। (http://www.globalresearch.ca/who-owns-greeces-debt/5460265)
অবাক বিষয় হলেও এটা সত্যি যে, বিভিন্ন সূচকে ইউরোপে সবচে বড় অস্ত্রের ক্রেতা গ্রিস। এই সংকটের সময়েও তা বন্ধ থাকেনি। কেন? ২০১০ সালের মে মাসে গ্রিসের তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী, থিওডর প্যাঙ্গালোস তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের এথেন্স সফরের সময়ে বলেছিলেন যে ‘দরকার নেই এমন অস্ত্র কিনতে বাধ্য হওয়ার’ অনুভূতি হয়েছিল তার, অস্ত্রচুক্তি তাকে ‘জাতীয় লজ্জার’ অনুভূতি দিয়েছিল। “মানুষকে তুমি কোন মুখে বলবে যে আমরা আরো ডুবোজাহাজ কিনছি, একই সঙ্গে আমরা চাই তোমার বেতন আর অবসরভাতা আরো কমিয়ে দিতে?” সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন অ্যাডমিরাল ফেনেকোস, সরকারি অস্ত্র ক্রয়ের প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন গ্রিক নৌবাহিনী থেকে। (The Submarine Deals That Helped Sink Greece
http://www.wsj.com/articles/SB10001424052748703636404575352991108208712) উল্লেখ্য যে, এই অস্ত্রের বৃহদাংশ জার্মানির কারখানাগুলোতে তৈরি হয়, সেখানে কর্মসংস্থান আর মুনাফা সৃষ্টি করে।
ওই ২০১০ সালেই ফ্রান্স ৬৬২ মিলিয়ন ইউরোর সামরিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের চুক্তি করে গ্রিসের সঙ্গে এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে এর টাকাটা ইইউর বেল আউট তহবিলের নিশ্চয়তাযুক্ত। অর্থাৎ কোনো কারণে গ্রিস এর দাম চুকাতে ব্যর্থ হলে গ্রিসকে উদ্ধার করার জন্য প্রদত্ত তহবিল থেকে তা শোধ করা হবে! ওই একই বছরে জার্মানি যখন গ্রিসের ওপর রক্তচোষা সব শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছিল গ্রিক সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ওপর, তখনো তারা ৩৩৬ মিলিয়ন দামের অস্ত্রপাতি বিক্রি করেছে। (EU accused of hypocrisy for £1 billion in arms sales to Greece www.telegraph.co.uk/news/worldnews/europe/greece/9129234/EU-accused-of-h...)
সংকটের আরেকটা দিক আছে। গ্রিসের গণভোটে ইউরো থেকে বেরিয়ে যাওয়া বা ইইউ থেকে বেরিয়ে আসা কোনোভাবেই প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু এটাকেও একটা হুমকি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রিকদের আতঙ্কিত করার জন্য। কিন্তু গণভোটে সিপরাস বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার তাৎপর্য কি? সেটা এই যে, যদি ইইউ তাদেরকে নিতান্তই বাধ্য করে বেরিয়ে যেতে, তারা নিজেদের পুরনো মুদ্রা দ্রাকমাতে ফেরত যেতে পারবে। সেটা গ্রিসের জন্য খুবই কঠিন একটা পথ হবে। নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে আইসল্যান্ড সাম্প্রতিককালে ভয়াবহ এক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। সেটার জন্য দরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জাতীয় ক্ষমতা, নতজানু নীতি নিয়ে সেটা কখনো কার্যকর করা সম্ভব হয় না। কিন্তু খুব সম্ভবত গ্রিসকে চূড়ান্ত আঘাত করার এই সাহসটা ইইউ দেখাবে না। কেননা, যদি এমন একটি জনসমর্থন নিয়ে গ্রিস কার্যকরভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো বেড়িয়ে আসতে পারে, বাকি ইউরোপের জন্য সেটা একটা বিশাল নিদর্শন হবে। এই ঝুঁকি ইউরোপ নেবে কি না সেটা বলা খুব মুশকিল। কারণ ইইউ যদি গ্রিসকে নিজের মতো করে ঋণ শোধ করতে দেয়, সেটার সুবিধা গ্রিসের কাছাকাছি অবস্থায় থাকা ঋণগ্রস্ত ইউরোপীয় দেশগুলো ভবিষ্যতে নজির হিসেবে ব্যবহার করবে। ইতালি, পর্তুগাল, স্পেন ও আয়ারল্যান্ড ঋণসংকটের দিক দিয়ে গ্রিসের ধারেপিঠেই আছে। ইউরোপের কর্তারা তাই কী ভূমিকা নেবেন, সেটা নির্ভর করবে অনেকখানি মনস্তাত্ত্বিক একটা লড়াইয়েরও ওপর। জার্মানির সামনের নির্বাচনেও এটা বড় একটা প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়াবে। এরই ইঙ্গিত করেছেন পদত্যাগী গ্রিক অর্থমন্ত্রী ইউনিস ভারোফাকিস।
পৃথিবীর কোনো সংকটই আগেরটার মতো না। আত্মসমর্পণ করা হবে, নাকি নতুন পথ খোঁজা হবে—ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার এটুকুই আছে। অনেকেই সিরজার নীতিকে নতজানু বলে নিন্দা করেছেন, অ্যাঙ্গেলা মের্কেলদের চোখে সিরজা আবার বেশি বেশি ঘাড় ত্যাড়া। এখন পর্যন্ত সাধারণভাবে সিরজা যা করেছে, তা হলো কখনোই আলোচনার টেবিল থেকে নিজেরা সরে না যাওয়া, অন্যদিকে নিজেদের নীতি থেকে পিছিয়েও না আসা। এরই অংশ হিসেবেই তারা গণভোটে গিয়েছে, কিন্তু গণভোটে নিজেদের জনসমর্থন প্রমাণ করেই আবারও আলোচনায় বসেছে। বর্তমান মুহূর্তে গ্রিসের যে জাতীয় পুনর্গঠন প্রয়োজন, অন্যদিকে ঋণের চাপ কমাবার জন্য যেসব কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তার উপযুক্ত ভারসাম্যপূর্ণ একটা কর্মসূচি নির্ধারণ খুব সহজ কাজ নয়। এই ভারসাম্য রক্ষায় খুব বেশি এদিক-ওদিক হলে বিপদ। নিশ্চিতভাবেই দেশকে রক্ষার জন্য একটা কৃচ্ছ্রসাধনের কর্মসূচিতে জনগণ নিজেরা কষ্ট করে হলেও সাড়া দেবে।
অন্যদিকে ইউরোপীয় মোড়লরা এমন কৃচ্ছ্রসাধন চাপিয়ে দিতে চাইবে যাতে যথাসম্ভব অস্থিমজ্জাও তারা খেয়ে নিতে পারে। কিন্তু ঋণ শোধের জন্য তাদের সঙ্গেই যথাসম্ভব কোনো একটা দরকষাকষিতে আসতেই হবে সিরজাকে, অথবা অনন্যোপায় হলে নিতে হবে কাস্ত্রোর মতো একটা মৌলিক পুনর্গঠনের কর্মসূচি। গ্রিস ইউরোতে থাকুক বা না থাকুক, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা যতক্ষণ না তারা নিজেদের হাতে তুলে নিতে পারছেন, ততক্ষণ গ্রিক জাতির এই রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে না। গণভোট সেই ক্ষমতা সিরজার হাতে তুলে দিয়েছে। বাকিটা সিরজার দায়।
গ্রিসে একটা আনুষ্ঠানিক কমিউনিস্ট পার্টি আছে, কিউবাতেও যেমন ছিল— কমিউনিস্ট পার্টি অব গ্রিস। গ্রিসের জাতীয় সংকটে বহুদিন ধরেই তারা নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে, পরিস্থিতির গতিমুখই বুঝতে কিংবা অগ্রসর হতে তারা পারেনি। এর ফলে যে গণবিচ্ছিন্নতা ও নেতৃত্বের অপারগতা তৈরি হয়, সেটাকে তারা ঢেকেছে নানা কমিউনিস্ট বোলচালে। সিরজা বিরোধিতার কল্যাণেই তারা ভালো প্রচারণা পেয়েছে গত গণভোটেও, কেননা উভয় পক্ষকেই তারা শয়তান হিসেবে উল্লেখ করেছে। যদিও গার্ডিয়ানের সংবাদে মনে হয়েছে, গণভোটের আগে আয়োজিত তাদের সমাবেশে উপস্থিত ব্যক্তিরাও না ভোটই দিয়েছে। কিন্তু অনুল্লেখ্য ও নামসর্বস্ব ভালো মানুষদের নিয়ে আলোচনা আজ আর নয়।
ফিরোজ আহমেদ : কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন। সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন