Skip to main content
NTV Online

মত-দ্বিমত

মত-দ্বিমত
  • অ ফ A
  • প্রতিক্রিয়া
  • সমসাময়িক
  • বহির্বিশ্ব
  • ব্যঙ্গ রঙ্গে
  • ফিরে দেখা
  • স্মরণ
  • বিদেশি কলাম
  • নগর দর্পণ
  • অতিথি কলাম
  • খেলাধুলা
  • পাঠকের কলাম
  • বিবিধ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
Follow
  • মত-দ্বিমত
ছবি

‘কনকা সেরা পরিবার’ সিজন- ৩ চ্যাম্পিয়ন ঢাকার সাহেদিন-ফারহানা পরিবার

কোহলির স্বপ্নজয়ে সারথি আনুশকা!

প্রকৃতিপ্রেমী বুবলী

ইউরোপের রাজাদের বিজয় উদযাপন

স্মার্ট লুকে কেয়া পায়েল

বর্ণিল আয়োজনে ‘মার্সেল হা-শো’ গ্র্যান্ড ফিনাল

জাপানে প্রধান উপদেষ্টা

কানে নজরকাড়া লুকে জাহ্নবী কাপুর

বর্ণিল সাজে সেমন্তী সৌমি

লাল টুকটুকে মিম

ভিডিও
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৭
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ১৪
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ১৪
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এই সময় : পর্ব ৩৮২৮
এই সময় : পর্ব ৩৮২৮
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৯
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৯
পবিত্র হজ্ব ২০২৫ (সরাসরি)
পবিত্র হজ্ব ২০২৫ (সরাসরি)
আলোকপাত : পর্ব ৭৭৬
টেলিফিল্ম : প্রিয় অভিভাবক
টেলিফিল্ম : প্রিয় অভিভাবক
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১৮
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১৮
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:২৯, ১৬ জুন ২০১৭
আপডেট: ০৮:৩২, ১৬ জুন ২০১৭
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:২৯, ১৬ জুন ২০১৭
আপডেট: ০৮:৩২, ১৬ জুন ২০১৭
আরও খবর
সাদাসিধে কথা: আর কতদিন এই ভাঙা রেকর্ড?
সাদাসিধে কথা: স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্ন
সাদাসিধে কথা: বাজাই আমার ভাঙা রেকর্ড
সাদাসিধে কথা: মানুষ মানুষের জন্য
সাদাসিধে কথা: এই লেখাটি অভিভাবকদের জন্য

সাদাসিধে কথা

পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:২৯, ১৬ জুন ২০১৭
আপডেট: ০৮:৩২, ১৬ জুন ২০১৭
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:২৯, ১৬ জুন ২০১৭
আপডেট: ০৮:৩২, ১৬ জুন ২০১৭

একটা দেশ কেমন চলছে সেটা বোঝার উপায় কী? জ্ঞানীগুণী মানুষদের নিশ্চয়ই এটা বের করার নানা উপায় আছে। তারা অর্থনীতির দিকে তাকাবেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বিবেচনা করবেন, দুর্নীতির পরিমাপ করবেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যাচাই-বাছাই করবেন এবং আরও অনেক কিছু বিশ্লেষণ করে একটা রায় দেবেন।

আসলে দেশ কেমন চলছে সেটা বের করা খুবই সহজ। দেশের একজন সংখ্যালঘু মানুষকে নিরিবিলি জিজ্ঞেস করবেন, ‘দেশটি কেমন চলছে?’ সেই সংখ্যালঘু মানুষটি যদি বলে, ‘দেশ ভালো চলছে’, তাহলে বুঝতে হবে দেশটি ভালো চলছে। আর সেই মানুষটি যদি ম্লান মুখে মাথা নেড়ে বলে, ‘দেশটি ভালো চলছে না’, তাহলে বুঝতে হবে দেশটি আসলেই ভালো চলছে না। দেশে ১০টা পদ্মা সেতু, এক ডজন স্যাটেলাইট আর ১০ হাজার ডলার পার ক্যাপিটা আয় হলেও যদি সংখ্যালঘু মানুষটি বলে ‘দেশ ভালো নেই’, তাহলে বুঝতে হবে আসলেই দেশ ভালো নেই। (সংখ্যালঘু শব্দটি লিখতে আমার খুব সঙ্কোচ হয়। সবাই একই দেশের মানুষ। এর মধ্যে কেউ কেউ সংখ্যাগুরু, কেউ কেউ সংখ্যালঘু— সেটি আবার কেমন কথা? কিন্তু আমি যে কথাটি বলতে চাইছি, সেটি বোঝানোর জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করা ছাড়া উপায় ছিল না।)

এখন যদি আমরা এই দেশের একজন হিন্দু, সাঁওতাল বা পাহাড়ি মানুষকে জিজ্ঞেস করি দেশ কেমন চলছে, তারা কী বলবে? নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সবাইকে ঘরছাড়া করা হয়েছিল। গাইবান্ধায় পুলিশে সাঁওতালদের ঘরে আগুন দিচ্ছে— পত্রপত্রিকায় সেই ছবি ছাপা হয়েছে। সর্বশেষ রাঙামাটির লংগদুর ঘটনায় পাহাড়ি মানুষদের বাড়ি জ্বালিয়ে তাদের সর্বস্ব লুট করে নেওয়া হয়েছে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য মা তার সন্তানদের বুকে চেপে ধরে মাইলের পর মাইল পাহাড় অতিক্রম করে জঙ্গলে লুকিয়ে আছে, বৃষ্টিতে ভিজেছে, রৌদ্রে পুড়েছে, অভুক্ত থেকে মশার কামড় খেয়ে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে চমকে চমকে উঠেছে। আমি যদি তাকে বলি— বাংলাদেশ অনেক বড় সম্ভাবনার দেশ, এবারে উন্নয়নের বাজেটেই হয়েছে চার লাখ কোটি টাকার, পদ্মা সেতুর ৪০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে, আগামী মাসে আমাদের নিজস্ব বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হবে— সেই অসহায় মা কি আমার কথা শুনে শূন্য দৃষ্টিতে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবেন না? তাকে কি আমি কোনোভাবেই বোঝাতে পারব যে আমাদের অনেক কষ্ট করে, যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে পাওয়া দেশটি স্বপ্নের একটি দেশ?

আমি তাকে কিংবা তার মতো অসংখ্য পাহাড়ি মানুষকে সেটি বোঝাতে পারব না। তাদের কাছে এই দেশটি হচ্ছে একটি বিভীষিকা, যেখানে প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষ এসে পুরোপুরি নিরপরাধ মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। তাদের রক্ষা করার কেউ নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থেকে এই ঘটনাগুলো ঘটতে দেয়। এই ঘটনাটি ঘটবে সেটি সবাই আঁচ করতে পারে, তারপরও কেউ সেটা থামানোর চেষ্টা করে না। আমি নিজেকে এই পাহাড়ি মানুষদের জায়গায় বসিয়ে পুরো বিষয়টা কল্পনা করে আতঙ্কে শিউরে উঠেছি।

পৃথিবীতে অন্যায় কিংবা অপরাধ হয় না, তা নয়। আমরা প্রতি মুহূর্তেই আমাদের চারপাশে এগুলো দেখছি। কিন্তু লংগদুর ঘটনাটা ভিন্ন। যুবলীগের একজন কর্মীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। কে মেরেছে ঠিকভাবে জানা নেই, প্রচার করা হলো— দু’জন চাকমা তরুণ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের শাস্তি দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হলো পুরোপুরি নির্দোষ কিছু পাহাড়ি গ্রামবাসীকে। একজন-দু’জন ক্রুদ্ধ মানুষ নয় হাজার হাজার সংগঠিত মানুষ পেট্রোলের টিন আর ট্রাক্টর নিয়ে হাজির হলো। পেট্রোল দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে আগুন দেওয়া হলো, ট্রাক্টর ব্যবহার করা হলো লুট করা মালপত্র বোঝাই করে নেওয়ার জন্য। বিচ্ছিন্ন একজন কিংবা দু’জন মানুষ বাড়াবাড়ি কিছু একটা করে ফেলছে— সেটি বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু কয়েক হাজার মানুষ মিলে একটা ভয়ঙ্কর অন্যায় করার জন্য একত্র হয়েছে— সেটা আমরা বিশ্বাস করি কেমন করে?

কিন্তু আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। কারণ আমরা বারবার এই ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমরা কেমন করে এত হৃদয়হীন হয়ে গেলাম?
২.

আমরা জানি, কিছুদিন আগেও আমাদের ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবইয়ে আদিবাসী মানুষদের সম্পর্কে অনেক ধরনের অসম্মানজনক কথা লেখা থাকত। সচেতন মানুষেরা একটি একটি করে বিষয় সবার চোখের সামনে এনেছেন। তখন সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু একটা প্রশ্ন তো আমরা করতেই পারি— এই পাঠ্যবইগুলো তো হেজিপেজি-অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, রুচিহীন, বুদ্ধিহীন মানুষেরা লেখেন না। এই বইগুলো লেখেন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাবিদরা। লেখা শেষ হওয়ার পর সম্পাদনা করেন আরও গুরুত্বপূর্ণ মানুষেরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। তাহলে পাঠ্যবইগুলোতে এ রকম অবিশ্বাস্য সাম্প্রদায়িক কথা কেমন করে লেখা হয়? কেমন করে আদিবাসী মানুষদের এত অসম্মান করা হয়?

কারণটা আমরা অনুমান করতে পারি। আমরা যাদের বড় বড় শিক্ষিত মানুষ হিসেবে ধরে নিয়েছি, তাদের মনের গভীরে লুকিয়ে আছে সঙ্কীর্ণতা। যারা আমার মতো নয়, তারা অন্য রকম। আর অন্য রকম মানেই অগ্রহণযোগ্য। অন্য রকম মানেই খারাপ, অন্য রকম মানেই নাক সিঁটকে তাকানো।

অথচ পুরো ব্যাপারটাই আসলে ঠিক তার বিপরীত। সারাজীবনে আমি যদি একটা বিষয়ই শিখে থাকি, সেটা হলো একটা উপলব্ধি— ‘বৈচিত্র্যই হচ্ছে সৌন্দর্য’। কোনও মানুষ কিংবা সম্প্রদায় যদি অন্যরকম হয়ে থাকে, তাহলে সেটা হচ্ছে বৈচিত্র্য এবং সেই বৈচিত্র্যটুকুই সৌন্দর্য।

পৃথিবীতে অনেক সৌভাগ্যবান দেশ রয়েছে যেখানে অনেক দেশের অনেক মানুষ পাশাপাশি থাকেন। তারা দেখতে ভিন্ন, তাদের মুখের ভাষা ভিন্ন, তাদের কালচার ভিন্ন, ধর্ম ভিন্ন, খাবার কিংবা পোশাক ভিন্ন। আমরা সেদিক থেকে অনেক দুর্ভাগা। আমাদের দেশে মানুষের মাঝে সেই বৈচিত্র্য নেই। ঘর থেকে বের হয়ে যেদিকেই তাকাই, সেদিকেই আমরা একইরকম মানুষ দেখতে পাই। তাদের মুখের ভাষা-চেহারা-পোশাক কোনোকিছুতেই পার্থক্য নেই। আমাদের দেশের একটুখানি ভিন্ন ধরনের মানুষ হচ্ছেন সাঁওতাল কিংবা গারোরা, পাহাড়ি মানুষ। এই মানুষগুলোকে আমাদের বুক আগলে রাখার কথা। অথচ আমরা তাদের অবহেলা করি!
আমাদের পরের প্রজন্ম শেখাতে হবে— পৃথিবীর সৌন্দর্য হচ্ছে বৈচিত্র্যে। সারাবিশ্বে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হচ্ছে ‘ডাইভারসিটি’। একটি দেশে যত বেশি ডাইভারসিটি, সেই দেশটি তত সম্ভাবনাময়। নতুন পৃথিবী আধুনিক পৃথিবী। আধুনিক পৃথিবীর মানুষেরা একে অন্যের সঙ্গে বিভেদ করে না। শুধু যে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করে না তা নয়; গাছ, ফুল, পশুপাখি সবাই মিলে যে একটা বড় পৃথিবী এবং সবার যে পাশাপাশি বেঁচে থাকার অধিকার আছে, সেটিও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে।

অথচ আমরা সবিস্ময়ে দেখতে পাই একজন-দু’জন নয়, কয়েক হাজার মানুষ মারমুখী হয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। কী তাদের অপরাধ? তাদের অপরাধ সেই মানুষগুলো আমাদের থেকে একটু ভিন্ন।
৩.

আমার শৈশবটি কেটেছে বাংলাদেশের নানা এলাকায়। বাবা পুলিশের অফিসার হিসেবে দুই-তিন বছর পর পর নতুন জায়গায় বদলি হয়ে যেতেন। সেই সুযোগে আমরা রাঙামাটি আর বান্দরবান— এই দুই জায়গাতেও ছিলাম। বান্দরবানে আমি স্কুলে পড়েছি, আমাদের ক্লাসে বাঙালি ছেলেমেয়ের পাশাপাশি পাহাড়ি ছেলেমেয়েরাও ছিল। তাদের অনেকে ভালো বাংলা বলতে পারত না। এখন অনুমান করি সে কারণে লেখাপড়াটা নিশ্চয়ই তাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। ক্লাসের ভেতরে লেখাপড়াটা নিয়ে আমাদের আগ্রহ ছিল না, ক্লাস ছুটির পর বনে জঙ্গলে পাহাড়ে নদীতে ঘুরে বেড়ানোতে আমাদের আগ্রহ ছিল বেশি। তাই ভালো বাংলা না জানলেও সেটা কোনও সমস্যা হতো না। ধর্ম, ভাষা, গায়ের রঙ, শরীরের গঠন কিংবা কালচার ভিন্ন হলেও সব মানুষ যে একেবারে একই রকম সেটি আমি শিখেছি নিজের অভিজ্ঞতায়।

বান্দরবানের সেই স্কুলে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে চমকপ্রদ শিক্ষক পেয়েছিলাম, যার কথা আমি কখনও ভুলিনি। আমি আমার নিজের শিক্ষক জীবনে তার শেখানো বিষয়গুলো এখনও ব্যবহার করে যাচ্ছি এবং এখনও ম্যাজিকের মতো ফল পেয়ে যাচ্ছি।

আমাদের এই শিক্ষক ছিলেন একজন পাহাড়ি (সম্ভবত মারমা) নারী। পাহাড়ি পোশাকে ক্লাসে আসতেন। একজন মানুষকে বিচার করতে হলে কখনও তার চেহারা নিয়ে কথা বলতে হয় না। কিন্তু অসৌজন্যমূলক হলেও আমাকে একটুখানি বলতে হচ্ছে, মধ্যবয়স্ক এই নারীর গলগণ্ড রোগ ছিল বলে তাকে কোনও হিসেবেই সুন্দরী বা আকর্ষণীয় বলার উপায় নেই। ভদ্র মহিলা দুয়েকটির বেশি বাংলা শব্দ জানতেন না। তিনি আমাদের ড্রয়িং টিচার ছিলেন, কিন্তু ছবি আঁকতে পারতেন না। কোনোদিন চক হাতে বোর্ডে কিছু আঁকার চেষ্টাও করেননি। কিন্তু তারপরও আমাদের ড্রয়িং ক্লাস নিতে কখনও তার কোনও অসুবিধা হতো না। ক্লাসে এসে তিনি বলতেন, ‘লাউ আঁকো’ কিংবা ‘বেগুন আঁকো’— এর বেশি কিছু বলেছেন বলে মনে পড়ে না।

আমরা তখন লাউ কিংবা বেগুন আঁকতাম। আমাদের সবারই স্লেট-পেন্সিল ছিল, যাবতীয় শিল্পকর্ম সেখানেই করা হতো। ছেলেমেয়েরা লাউ কিংবা বেগুন এঁকে আমাদের ড্রয়িং টিচারের কাছে নিয়ে যেত। লাউয়ের ও বেগুনের আকার-আকৃতি দেখে তিনি বিভিন্ন মাত্রার উল্লাস প্রকাশ করতেন এবং চক দিয়ে স্লেটের কোনায় মার্ক দিতেন। কেউ চার, কেউ পাঁচ, কেউ ছয়, কিংবা সাত। আমার ছবি আঁকার হাত ভালো ছিল। তাই আমার লাউ কিংবা বেগুন দেখে তিনি উল্লসিত হয়ে দশ দিয়ে দিতেন।

ড্রয়িং ক্লাস হতে লাগল, তিনি আমাদের শিল্পকর্মে নম্বর দিতে লাগলেন। আমরা আবিষ্কার করলাম, তার দেওয়া নম্বরও বাড়তে শুরু করেছে। দশের বাধা অতিক্রম করে কেউ পনেরো, কেউ সতেরো পেতে লাগল। কতর ভেতর পনেরো কিংবা সতেরো— সেটা নিয়ে আমাদের কোনও প্রশ্ন ছিল না। হয়তো প্রজাপতি আঁকতে দিয়েছেন, কেউ প্রজাপতি এঁকে নিয়ে গেছে এবং তাকে বাইশ দিয়েছেন। পরের জনের প্রজাপতি হয়তো আরও সুন্দর হয়েছে, তাকে ত্রিশ দিলেন। এর পরের জন্য হয়ত পুরো চল্লিশ পেয়ে গেলো।

আমরা সব ক্লাসেই লেখাপড়া করে আসছি, কোথাও এমন নম্বর পাইনি। একটা কলা এঁকে যখন নম্বর পেয়ে যাই, তখন মনে হয় রাজ্য জয় করে ফেলেছি!

কাজেই আমাদের এই ড্রয়িং ক্লাসটা ছিল আনন্দময় একটা সময়। লাউ, কলা, প্রজাপতি শেষ করে তখন আমরা পশুপাখি আঁকতে শুরু করলাম। শুধুমাত্র একটা গরু এঁকে একদিন আমি আটশ পঞ্চাশ পেয়ে গেলাম। আনন্দে-উত্তেজনায় আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। আমাদের ড্রয়িং টিচার ততদিনে বুঝে গেছেন, আমি ভালো আঁকতে পারি এবং সেজন্য আমার প্রতি তার এক ধরনের স্নেহ ছিল। প্রায় নিয়মিতভাবে আমি ক্লাসে সবসময় সবার চেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে আসছি।

একদিন ক্লাসে এসে বললেন, ‘বুডডিশ আঁকো’। শব্দটি আমি বুঝতে পারিনি। তখন অন্যরা বুঝিয়ে দিল, ড্রয়িং টিচার বৌদ্ধমূর্তি আঁকতে বলেছেন। আমি তখন বিপদে পড়ে গেলাম। বান্দরবানের ক্যাং ঘরে নানা রকম বৌদ্ধমূর্তি দেখে এসেছি। কিন্তু তার ছবি আঁকার মতো খুঁটিনাটি লক্ষ করিনি। আমাদের ক্লাসে আরও একজন মারমা ছেলে ভালো ছবি আঁকত। সে অসাধারণ একটা বৌদ্ধমূর্তি এঁকে নিয়ে গেলো এবং ড্রয়িং টিচার তাকে চৌদ্দশ নম্বর দিয়ে দিলেন। আমি বসে বসে মাথা চুলকে যাচ্ছি। আমার ড্রয়িং টিচারের তখন আমার জন্য মায়া হলো। মারমা ছেলেটির স্লেটটি আমার সামনে রেখে সেটা দেখে দেখে আঁকতে বললেন। আমি সেটা দেখে দেখে একটা বৌদ্ধমূর্তি আঁকলাম এবং আমিও চৌদ্দশ নম্বর পেয়ে গেলাম!

এরপর এত বছর পার হয়ে গেছে, আমি আমার এই ড্রয়িং টিচারের কথা ভুলিনি। তিনি আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিল্পটি দিয়ে গেছেন। সেটি হচ্ছে ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিতে হয়! আমিও আমার সারাটি জীবন ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিয়ে আসার চেষ্টা করে আসছি এবং দেখে আসছি এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে।

এই মারমা ড্রয়িং টিচারের মতো নিশ্চয়ই একজন সাঁওতাল বৃদ্ধ কিংবা গারো যুবক রয়েছে, যার কাছ থেকে আমার জীবনের কোনও একটি শিক্ষা পাওয়ার কথা ছিল। আমরা সেটি পাইনি। আমরা মানুষে মানুষে বিভাজন করে নিজেদের ভাষা-ধর্ম-কালচার নিয়ে অহঙ্কার করে অন্যদের তাচ্ছিল্য করতে শিখিয়েছি। অবহেলা করতে শিখিয়েছি। আমরা যদি আধুনিক পৃথিবীর আধুনিক মানুষ হতে চাই, তাহলে সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মান দিয়ে বেঁচে থাকা শিখতে হবে।
৪.

হয়তো বাংলাদেশ কিছুদিনের মধ্যে অনেক উন্নত হয়ে যাবে। আমাদের মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে যাবে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের প্রশ্ন ফাঁস হবে না, স্কুলে আনন্দময় পরিবেশে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে। নিজেদের অর্থে আমরা বিশাল বিশাল পদ্মা ব্রিজ তৈরি করব। কিন্তু যদি একটি পাহাড়ি শিশু তার মায়ের হাত ধরে আতঙ্কে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়ের জন্য জঙ্গলে ছুটে যেতে থাকে, তাহলে কি আমাদের সব উন্নয়ন পুরোপুরি অর্থহীন হয়ে যাবে না?

দেশের একটি নাগরিককেও যদি আমরা সম্মান নিয়ে শান্তিতে নিজের ঘরে ঘুমানোর পরিবেশ তৈরি করে দিতে না পারি, তাহলে বিশাল পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাদাসিধে কথা

পাঠকের পছন্দ

গরমে ঘামাচিতে জেরবার?

ভ্রমণের সময় যা মনে রাখবেন

কীভাবে হবেন ভালো সহকর্মী?

সর্বাধিক পঠিত
  1. আদিত্যের সঙ্গে প্রেমে শিক্ষা হয়েছে, কোন ভুলটা আর করতে চান না অনন্যা?
  2. ‘ধুম ৪’ সিনেমায় খলনায়ক রণবীর, পরিচালক আয়ন মুখার্জি
  3. যে সিনেমায় অভিনয় করতে টাকা নেননি অমিতাভ
  4. মা হলেন ‘হীরামন্ডি’ খ্যাত অভিনেত্রী শারমিন সেগাল
  5. রহস্য নিয়ে আসছে অজয়ের ‘দৃশ্যম ৩’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা
  6. বলিউডের স্মরণীয় জুটি
সর্বাধিক পঠিত

আদিত্যের সঙ্গে প্রেমে শিক্ষা হয়েছে, কোন ভুলটা আর করতে চান না অনন্যা?

‘ধুম ৪’ সিনেমায় খলনায়ক রণবীর, পরিচালক আয়ন মুখার্জি

যে সিনেমায় অভিনয় করতে টাকা নেননি অমিতাভ

মা হলেন ‘হীরামন্ডি’ খ্যাত অভিনেত্রী শারমিন সেগাল

রহস্য নিয়ে আসছে অজয়ের ‘দৃশ্যম ৩’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা

ভিডিও
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৯
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৯
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫২
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৭
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ১৪
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ১৪
পবিত্র হজ্ব ২০২৫ (সরাসরি)
পবিত্র হজ্ব ২০২৫ (সরাসরি)
টেলিফিল্ম : প্রিয় অভিভাবক
টেলিফিল্ম : প্রিয় অভিভাবক
গানের বাজার, পর্ব ২৩৫
গানের বাজার, পর্ব ২৩৫
এই সময় : পর্ব ৩৮২৮
এই সময় : পর্ব ৩৮২৮
নাটক : প্রেম আমার
নাটক : প্রেম আমার
আপনার জিজ্ঞাসা (সরাসরি) : পর্ব ৮৭০

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Browse by Category

  • About NTV
  • Career
  • NTV Programmes
  • Advertisement
  • Web Mail
  • NTV FTP
  • Satellite Downlink
  • Europe Subscription
  • USA Subscription
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Contact
  • Archive

NTV Prime Android App

Find out more about our NTV: Latest Bangla News, Infotainment, Online & Live TV

Qries

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited. All rights reserved

x