মানুষ মানুষের জন্য
আপনার সন্তানকে স্বাবলম্বী, সৎ, সুন্দর হতে দিন, রোবট নয়
খেয়ে না-খেয়ে রোজগারের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করছেন সন্তানের পেছনে। শেষ কবে নিজের জন্য ফ্যাশনেবল একটা জামা/প্যান্ট কিনেছেন, তা কি সত্যি মনে আছে?
কিনবেন কিনবেন করেও এই জানুয়ারিতে এসে বাতিল করলেন বাচ্চার স্কুল ভর্তির জন্য। এই যে জীবনের অনেক আহ্লাদ বন্ধ করে বাচ্চার পেছনে ইনভেস্ট করে চলছেন, কেবল মানুষ করার জন্যই। মানুষের মতো মানুষ হবে। প্রতিষ্ঠিত হবে। এই তো স্বপ্ন। তাই আজ বুক আগলে তাকে এগিয়ে দিচ্ছেন।
আচ্ছা জানেন কি, কত যত্ন করে ভালোবেসে মমতার আগলে বেঁধে আপনি আপনার সন্তানকে অমানুষ, অমানবিক, রোবট তৈরি করছেন সেই কথা? রেগে গেলেন তো! আচ্ছা বলুন, সেদিন বাচ্চার স্কুলের পিকনিকে গিয়ে করলেনটা কী? বসার জায়গার অভাব ছিল বলে আপনি নিজে না বসে বাচ্চাকে বসিয়ে রাখলেন। তারপর যখন একটা সিট খালি হলো, তখন হুমড়ি খেয়ে গিয়ে সেটি নিজের দখলে নিলেন। এরপর পা দুলিয়ে সারা দিন সিট দুখানি দখল করে বসে থাকলেন। এর মাঝে কতবার আপনার বাচ্চার বন্ধুর মা এসে ঘুরেফিরে গেল। দাঁড়িয়ে থাকল। কতজনের সঙ্গে গল্পও করলেন ওই বসে থেকেই। আপনি নিজে তো নয়ই, বাচ্চাকেও কখনো বলেননি বন্ধুর মায়ের জন্য সিট ছাড়তে। আপনি জানেন কি, এই যে আপনার আগলে রাখা বাচ্চাকে চেয়ার ছেড়ে দিতে দিলেন না, এতে কী হলো?
আপনার আদুরে নাদুস-নুদুস বাচ্চাটা শিখে নিল, নিজের জায়গা ছাড়তে নেই। এতে কী হবে? আপনার এই শিক্ষার জোরেই একদিন সে আপনার জায়গা দখল করেও বসে থাকবে। কেননা, সে যে আপনার কাছ থেকেই শিখছে দখলে রাখতে হয়। বড়দের সম্মান করতে হয় সে জানবে কী করে?
বলছি কি নামীদামি স্কুলে ভর্তি করে, বাসায় টিউটর দিয়ে, কোচিং করিয়ে পয়সা খরচ করে রোবট বানাবেন না প্লিজ। তার চেয়ে মানবিকতা শিখিয়ে দিন। কিছু শিখিয়ে দিন। ভালোবাসতে পারার ক্ষমতা দিয়ে দিন। স্বপ্ন দেখতে দিন। দেখবেন বিশ্ব জয় করে নিয়েছে।
রোজগারের এক-তৃতীয়াংশ কিংবা আরো বেশি খরচ করে যদি মানবিকতা না শেখাতে পারেন, তবে ও চেষ্টা বাদ দিন। বরং নিজে ভালো একটা স্কুলে ভর্তি হোন। যেখান মানসিক প্রতিবন্ধীর চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়।
আপনার মতো গাধা জীবনেও দেখি নাই! যে নিজের ভালো বোঝে না, তার মতো গাধা কেউ আছে বলেন? রাগ করুন আর গালাগাল করুন, সত্য হলো আপনি নিজে সেই বিরাট গাধা। আচ্ছা স্কুলে যাওয়ার সময় বাচ্চার স্কুলব্যাগ রোজ আপনি কাঁধে করে নেন কেন? স্কুল থেকে ফেরার সময় বাজার করে সবজির ব্যাগটাও আপনিই নেন কেন?
আপনার সন্তান বলেই কি এমন নিষ্কর্মা করে রাখার অধিকার আপনার আছে? মমতার নামে ওর জীবন পরনির্ভরতায় ভরে দেওয়ার অধিকারই বা কে দিয়েছে আপনাকে? যে ভালোবাসা উড়তে দেয় না, প্লিজ, তা থামান। একটা স্বাভাবিক সুন্দর স্বাবলম্বী জীবন তৈরির পথে অন্তরায় না হয়ে ভালোবাসার আকাশ হযে উঠুন। মানবিক সব গুণের অধিকারী করে স্বাবলম্বী হতে শেখান। বড়কে সম্মান করতে শেখান। ছোটদের ভালোবাসতে।
অন্যের উপকারের জন্য নিজেকে এগিয়ে নিতে শিখিয়ে দিন। দেখবেন সময় হলে আপনার হাত ছাড়বে না। নইলে নচিকেতার বৃদ্ধাশ্রম গান গাইতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে...।
বলছি রোধ করুন আদিখ্যেতা! আপনার সন্তানকে স্বাবলম্বী, সৎ, সুন্দর হতে দিন। কুলষিত করবেন না। ভালোবাসুন। ভালোবাসতে দিন। সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। রোবট নয়।
লেখক : তরুণ উদ্যোক্তা, লাকী আইডিয়াবিডি ডটকম।