আবরার হত্যা : শিক্ষার্থীদের প্রকাশ করা ফুটেজে যা আছে
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মারধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় শেরেবাংলা হলের সিসিটিভি ক্যামেরার ১৫ মিনিটের একটি ফুটেজ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে সিসিটিভি ফুটেজটি তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে শেয়ার করেন। মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। এর আগে সোমবার রাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে ফুটেজটি তাঁরা সংগ্রহ করেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত রোববার রাত ৮টা ১৩ মিনিটে মো. শাদাত, তানিম, বিল্লাহ, অভি ও সাইফুল মিলে আবরার ফাহাদকে নিয়ে নিচতলার করিডোর দিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে যাচ্ছেন। পরে ৯টা ৭ মিনিটে অনিক সরকার, মো. মেহেদী হাসান রবিন ও মেফতাহুল ইসলাম জিয়নকে দোতলায় উঠতে দেখা যায়। তার মিনিটখানেক পরই যান মুজাহিদ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আবরারকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বড় ভাইরা ডাকছেন বলে সঙ্গে করে আনেন তাঁরা।
এরপর দোতলার করিডোরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১১টা ৭ ও ১০ মিনিটে প্রথমে জেমি ও তোহাকে বারান্দা দিয়ে সিঁড়ির দিকে নেমে যেতে দেখা যায়। পরক্ষণেই যান রাফাত, মোরশেদ ও বিল্লাহ। তারপর নেমে যান মাজেদ ও মনির। এরপর ১১টা ৩৯ মিনিটে অনিকসহ এদের সবাই আবার দোতলায় উঠে আসেন। রাত ১২টা ২৩ মিনিটে দোতলায় উঠে ২০১১ নম্বর কক্ষের দিকে যান বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু। সাড়ে ১২টায় ওই কক্ষের দিকে যান মোয়াজ। ১২টা ৩৬ মিনিটে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে যান বিটু (সেদিন সকালে গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে কথা বলেন বিটু)। পরক্ষণেই সকাল, মুজাহিদ ও মনির নিচে যান।
রাত ১টার দিকে রাফাত, মনির, সকাল, মোরশেদ, ইসমাইল, বিল্লাহ, মাজেদ, মোয়াজ, জেমি, মুজাহিদ, রবিন, তানভীর ও অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েকজনকে করিডোরে চলাফেরা করতে দেখা যায়।
এরপর ১টা ১৩ মিনিটে আবরার ফাহাদকে পাঁজাকোলে করে করিডোরে দিয়ে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। আবরারকে ধরে ছিলেন মোয়াজ, তানিম, জেমি। আর পেছনে পেছনে প্রায় সবাই আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসেন।
পরে ২টা ৩৫ মিনিটে ২০০৫ নম্বর কক্ষ থেকে ফাহাদকে তোষকের ওপর রেখে সিঁড়ির মাঝামাঝি জায়গাটিতে রাখা হয়। জেমি, মোয়াজ, বিল্লাহ, তানিম, সাইফুল, মাজেদ ও আকাশ মিলে আবরারের নিথর দেহ নিচতলায় সিঁড়ির ওই জায়গায় রাখেন। দেড়টা থেকে আড়াইটা, এই সময়টাতে প্রায় সবাইকেই কয়েকবার করে নিচতলা, দোতলার মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। প্রত্যেকের চেহারায় চিন্তার ছাপ।
৩টা ৫ মিনিটে সেখানে হাজির হন বুয়েটের চিকিৎসক ডা. মাশুক এলাহী। ছাত্ররা তৎক্ষণাৎ স্ট্রেচার নিয়ে আসেন। চিকিৎসক আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন। এরও ২০ মিনিট পর ৩টা ২৫-এ হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ঘটনাস্থলে আসেন। একটি বিছানার চাদর দিয়ে ঢাকা আবরারের মরদেহ সামনে রেখে তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেলকে কথা বলতে দেখা যায়। পরে হল প্রাধ্যক্ষ চাদর তুলে আবরারের শরীর দেখেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মারধরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন অনিক সরকার।
এদিকে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে দেওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, উপ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, দুই সদস্য মুনতাসির আল জেমি ও এহতেসামুল রাব্বি তানিম এবং শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির ও মো. আকাশ হোসেন।