আশা করব রায় যেন দ্রুত হয় : আবরারের বাবা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২) হত্যা মামলার রায় পিছিয়েছে। আগামী ৮ ডিসেম্বর রায়ের নতুন দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। আজ রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই দিন নির্ধারণ করেন।
রায়কে কেন্দ্র করে আজ বিচারঙ্গনের দিকে নজর ছিল বিচারপ্রার্থীসহ সবার। এ কারণে আবরারের পরিবার ও আসামিদের অভিভাবকরাও আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আগামী ৮ ডিসেম্বর রায়ের নতুন দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আদালতের রায় পেছানোর আদেশের পর আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আশা করেছিলাম, আজ রায় হবে। সেজন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে আদালতে এসেছি। কিন্তু রায় হচ্ছে না। এ বিষয়ে কিছুই বলার নাই। তবে আশা করব, রায়টি যেন দ্রুত হয়।’
বরকত উল্লাহ আরও বলেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে আমাদের রায় শোনার জন্য আসতে হয়েছে। আসা-যাওয়া অনেক কষ্টের। আজকে রায় হয়ে গেলে ভালো হতো।’
এদিকে আসামিপক্ষের কয়েকজন অভিভাবক আদালতের বারান্দায় অপেক্ষমান থাকলেও তারা কেউই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চায়নি।
এর আগে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের আদালতের হাজতখানা রাখা হয়। এরপরে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে আসামিদের আদালতের হাজতখানা থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এজলাসে হাজির করা হয়।
আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ৭ অক্টোবর ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এরপর ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) কার্যালয়ে আবেদন করেন মো. বরকত উল্লাহ। পরে ১২ মার্চ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আবরার হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর ফাইল অনুমোদন করেন।
মামলার ২৫ আসামি
অভিযোগপত্রে যে ২৫ জনকে আসামি করা হয়, তারা হলেন—বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, ছাত্রলীগকর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
আসামিদের মধ্যে মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ পলাতক। বাকি ২২ জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। এ মামলায় আসামিদের আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।