ঢাবিতে সমতার ভিত্তিতে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার দাবি ছাত্রসংগঠনগুলোর
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা কার্যক্রম ও আবাসন নিয়ে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলো নিয়ে গঠিত পরিবেশ পরিষদ। এতে ১৩টি ক্রিয়াশীল ছাত্র-সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। গতকাল শনিবার এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, পরিবেশ পরিষদের সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ তাঁর সংগঠনের নেতাদের অংশ নিতে দেখা যায়নি। এতে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সভায় ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন। এতে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেগুলো হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন, শিক্ষা কার্যক্রম ও বর্তমানে পরিচালিত অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদের অভিমত গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর ছাত্রত্ব নেই— এমন শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার বিষয়ে সহযোগিতা করা।
পরিবেশ পরিষদের বৈঠকে ছাত্রলীগ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করে। এর মধ্যে অনলাইন ক্লাসের আওতায় আসতে পারেনি এমন অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের ডিভাইসের জন্য বা মোবাইল ডাটার খরচের জন্য তালিকা করে ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে আর্থিক অনুদান, অনলাইন ক্লাসের আওতায় না থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য রিকভারি প্ল্যানের আওতায় সাপ্লিমেন্টারি ক্লাসের ব্যবস্থা রাখা ও এ বছরের উন্নয়ন ফি সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘ক্যাম্পাস খোলার আগেই শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ ও গাইডলাইন প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। চাকরি প্রত্যাশী তরুণরা করোনাকালীন সংকটের কারণে বয়সজনিত জটিলতায় যেন না পড়ে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের আশাবাদও ব্যক্ত করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় ছুটি থাকার কারণজনিত সেশনজট যেন সার্বিকভাবে সমন্বয় করে সমাধান করা হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনিক উদ্যোগের জন্যও বলা হয়েছে।’
ছাত্রদলের পক্ষ থেকেও কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন সংগঠনটির নেতারা। জানতে চাইলে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যেহেতু করোনা এখন সর্বত্র বিরাজমান, সেক্ষেত্রে একাডেমিক ভবন এবং হলগুলো এখন না খোলার প্রস্তাব করেছি। এ ছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস অব্যাহত রাখা, একই সঙ্গে যারা অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তাঁদের ডিভাইস ও নেট খরচ দেওয়ার কথাও বলেছি।’
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী এবং বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট যুক্ত ছিলেন।
পরিবেশ পরিষদের সভায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ তাঁর সংগঠনের নেতাদের অংশ না নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের এই মিটিংয়ে আহ্বান করা হয়নি। আমরা এর ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আগামী মিটিংগুলোতে যেন আমাদের আহ্বান জানানো হয়।’
জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘যেহেতু ডাকসুর মেয়াদ শেষ। তাই আমরা পরিবেশ পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ডাকসু থাকলে অবশ্যই ডাকসু নেতাদের সঙ্গে এই আলোচনা হতো।’
এদিকে, মিটিংয়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ছাত্র-সংগঠনের নেতারা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত রাখার উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তবে তাঁরা সব শিক্ষার্থীর অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণের জন্য চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রযুক্তির অবকাঠামো উন্নয়ন, ডাটা প্যাকেজ ও ডিভাইস প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে মূল্যায়নযোগ্য পরীক্ষা কার্যক্রম অনলাইন কার্যক্রমের আওতায় না আনার জন্য তাঁরা কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।