ড্রেনে পড়ে মৃত্যু, মাতৃহীন দুই জমজ সন্তানের আহাজারি

তাদের ছোট্ট চোখগুলো তখনও দরজার দিকে স্থির। তারা জানত না, সকাল বেলায় যে মা কাজে বেরিয়েছিলেন, তিনি আর কখনোই ফিরে আসবেন না। মায়ের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই দুটি অবুঝ শিশু ফারিয়া তাসনিম জ্যোতির (৩২) জমজ সন্তান। গাজীপুরের এক খোলা ড্রেনে পড়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারানো জ্যোতির নিথর দেহ যখন গতরাতে (মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই) চুয়াডাঙ্গা শহরের বাগানপাড়ার নিজ বাড়িতে পৌঁছায়, তখন সেখানকার পরিবেশ এক হৃদয়বিদারক আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে। মায়ের কফিন জড়িয়ে ধরে দুটি শিশু শুধু আকুল কণ্ঠে কেঁদে উঠছিল, ‘আম্মু, ওঠো!’ তাদের সরল ডাক যেন পাথরের বুকেও রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছিল। মায়ের জন্য এই অনন্ত অপেক্ষা, এ যেন প্রকৃতির এক নির্মম পরিহাস, যা পুরো পরিবারকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে।
ফারিয়া তাসনিম জ্যোতি ছিলেন ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানির কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার। চাকরির প্রয়োজনে গিয়েছিলেন টঙ্গীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে। রোববার (২৭ জুলাই) রাতে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে ফিরছিলেন, পথেই পা পিছলে খোলা ড্রেনে (হাসপাতালের সামনে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকা স্ল্যাববিহীন ম্যানহোলে) পড়ে যান। তখন থেকেই নিখোঁজ হন। তিন দিন পর টানা ৩৭ ঘণ্টার অভিযান শেষে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বাঁশপট্টি এলাকার বিলে তার মরদেহটির সন্ধান পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে শালিকচূড়া বিল থেকে উদ্ধার হয় তার মরদেহ।
দুর্ঘটনায় নিহত ফারিয়া তাসনিম জ্যোতির আট বছর বয়সী যমজ সন্তানের মা। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর ওলিউল্লাহ আহাম্মদ বাবলুর মেয়ে।
মঙ্গলবার রাত ৯টায় চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাগানপাড়া-সংলগ্ন পুরাতন জামে মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় জ্যোতিকে। তাকে শেষবারের মতো দেখতে হাজির হন এলাকাবাসী, সহকর্মী, আত্মীয়-পরিজনসহ শত শত মানুষ।
জ্যোতির বড় ভাই মো. শোভন জানান, ‘আমার বোন সারা জীবন সংগ্রাম করে সংসার চালিয়েছে। দুই সন্তানকে মানুষ করার স্বপ্ন ছিল তার। এখন ওরা শুধু মায়ের মুখ খুঁজছে।’
শোভন আরও বলেন, ‘এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যার নামান্তর। খোলা নালা দিয়ে কারো জীবন যেন এভাবে নিভে না যায়, এমন মৃত্যুর যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়।’