মাংস চুরির দায়ে নারী নির্যাতন, আসামি ছিনিয়ে নিতে থানা ঘেরাও

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন ও চুল কেটে দেওয়া এবং বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ সেই মামলার আসামি গ্রেপ্তার করলে আসামি ছিনিয়ে নিতে থানা ঘেরাও করে গ্রামবাসী
গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত ৮টায় সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। এ মামলায় আজ বুধবার (১১ জুন) সকাল ৯টার দিকে তিন নারী আসামিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের ছিনিয়ে নিতে সকাল ১১টা থেকে থানা ঘেরাও করে রাখে শতাধিক গ্রামবাসী। থানা চত্বরে সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট থেকে ৫১ মিনিট পর্যন্ত গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ও দাবড়া-দাবড়ির ঘটনা ঘটে। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে ওসির পিকআপে করে আসামিদের আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।
আসামিরা হলেন উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভিন খাতুন ও বক্করের স্ত্রী লিপি খাতুন।
সরেজমিন থানা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, থানা চত্বরে উৎসুক জনতার ভিড়। পুলিশ আসামিদের গাড়িতে তুলছেন। আর জনগণ আসামি নিয়ে যেতে বাধা প্রদান করছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন।
এ সময় মির্জাপুর গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন বলেন, ওই নারী আমার বাড়ি থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। আর পুলিশ চোরের পক্ষ নিয়ে আমার স্ত্রীসহ তিনজনকে ধরে এনেছে। আমরা চোরের শাস্তি ও আটকদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেছি।
একই এলাকার আমিরুলসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ওই নারী চোর। এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করে। সেদিন লোকজন ধরে বিচার করেছে। আর পুলিশ আমাদের লোক ধরে এনেছে। আমরা সঠিক বিচার চাই।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, গত সোমবার বিকেলে প্রতিবেশীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে। সে সময় প্রতিবেশীর স্ত্রী তাকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে মাংস কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান স্বামী।
ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন রাত ৮টার দিকে তাদের বাড়িতে ভাঙচুর করে তাঁকে তুলে ফের প্রতিবেশীর বাড়ি নিয়ে আসে। সেখানে তাঁকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দেয়। রাত ১০টার দিকে স্বজন ও এলাকাবাসী নিয়ে সালিশ বসান স্থানীয় ইউপি সদস্য। এ সময় মারধরের শিকার নারীর দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মামলার বাদী বলেন, ষড়যন্ত্র করে চুরির নাটক সাজিয়ে আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে গ্রামের লোকজন। আমি বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছি। কিন্তু মামলা তোলার জন্য সবাই হুমকি দিচ্ছে।
ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় শতাধিক বাসিন্দা নারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছে। আনন্দ-উল্লাস করছে। কেউ কেউ এসব দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রশিদ বলেন, শারীরিক নির্যাতন, চু্ল কাটা, ভাঙচুর- লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে এক নারী মামলা করেছেন। মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
থানা ঘেরাও করার ঘটনা স্বীকার করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, আসামিদের আদালতে নেওয়ার সময় গ্রামের লোকজন বাধা প্রদানের চেষ্টা করেছে। তবুও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।