রাজশাহীতে জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজশাহীতে জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। তবে এখনও আশানুরূপ বিক্রি শুরু হয়নি বলে জানাচ্ছেন খামারিরা। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই হাটগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯টি পশু, যা দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু রাজশাহী জেলাতেই চাহিদা ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৭টি হলেও প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি পশু। চাহিদার তুলনায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৬টি অতিরিক্ত পশু অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হবে।
জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার ৩০২টি হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা হবে, যার মধ্যে ১৬১টি স্থায়ী ও ১৪১টি অস্থায়ী। হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধান ও রোগনির্ণয়ের জন্য ২১৩টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এছাড়া, জাল টাকা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, ব্যাংকের বুথ ও ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাও রাখা হয়েছে হাটগুলোতে।
খামারিরা বলছেন, গোখাদ্যের লাগামছাড়া দাম এবার পশুর বাজারে বড় প্রভাব ফেলবে। পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের খামারি সাইফুর রহমান জানান, চারটি কোরবানিযোগ্য গরু খামারে আছে। সব খাবার কিনে দিতে হয়, খরচ বেড়েছে অনেক।
বাঘা উপজেলার খামারি সাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিবছরই আমরা অন্তত ২০-২৫টি গরু পালন করি। এবারও ২০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করছি। গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পশুর লালনপালন খরচও বেড়েছে। তাই প্রত্যাশিত দাম না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রি করছি না।
দুর্গাপুর উপজেলার উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আমার খামারে দুটি ষাঁড় আছে। প্রত্যেকটি ওজনে সাত-আট মণের বেশি হবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দেখতে আসছেন। কিন্তু এখন যে দাম বলছেন, তাতে খরচ উঠবে। ঈদ আসতে আরও বেশ কিছুদিন সময় আছে। এর মধ্যে কিছুটা লাভ পেলেই বিক্রি করে দেব।
নগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম প্রতিবছর নিজ বাড়িতে দুই থেকে তিনটি ষাঁড় পালন করের ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য। তিনি বলেন, এবার দুটি ষাঁড় পালন করেছি। দুই বছর আগে দেড় লাখ টাকায় গরু দুটি কিনেছিলাম। গত ঈদে বিক্রি করিনি, এবার বিক্রি করার অপেক্ষায় ছিলাম। এগুলোর দাম এখন প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে। এখনও হাট জমে না ওঠায় বিক্রির জন্য নেওয়া হয়নি।
গরু ব্যবসায়ী আয়নাল হক বলেন, খামারের গরুর চেয়ে বাড়িতে লালনপালন করা গরুর চাহিদা বেশি। তাই পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে গরু দেখছি। তবে এবার দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন খামারিরা। ফলে আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার বেশি দামে পশু কিনতে হবে ক্রেতাদের।
রাজশাহীতে গবাদিপশুর খাবার বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এক বস্তা গমের ভুসির দাম সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। এছাড়া খইলসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আবার বিভিন্ন কোম্পানির দানাদার গোখাদ্যের (সম্পূরক) ২৫ কেজির একেকটি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। এছাড়া ভুট্টার আটা, চালের গুঁড়া (খুদ), অ্যাঙ্কর ভুসি, মসুরের ভুসি, সরিষার খৈলসহ সবকিছুর দাম কয়েক গুণ বেড়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতোয়ার রহমান জানান, জেলায় এ বছর কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৭টি। এর বিপরীতে চার লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় এক লাখ ১২ হাজার ৪৫৬টি পশু বেশি রয়েছে। অতিরিক্ত এসব পশু বিক্রির জন্য নেওয়া হবে দেশের অন্যান্য জেলায়।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, এখন আর ভারতীয় গরু আসে না। পর্যাপ্ত গবাদিপশুর মজুদ আমাদের নিজেদেরই আছে। বাইরের গরু আসে না বলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। আবার চাহিদার তুলনায় মজুদ বেশি থাকায় দাম খুব বেশি বাড়বেও না। ফলে ধরে নেওয়া যায় যে বাজারে এমন দাম হবে যেটা ক্রেতা-বিক্রেতা সবার জন্যই ভালো হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই হাটগুলো জমে উঠবে। বিভাগের সবচেয়ে বড় পশুহাট রাজশাহীর সিটি হাট। এটা ইতোমধ্যেই জমে উঠতে শুরু করেছে।