টুসি ‘হত্যার’ বিচার দাবিতে দেশে-বিদেশে বিক্ষোভ
সিরাজগঞ্জবাসীর দাবি, সোনিয়া আশরাফ টুসিকে হত্যা করা হয়েছে। আর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত টুসির স্বামী শামস এলাহী উইলিয়াম, ননদ কুইন রহমান ও শ্বাশুড়ি লাইলি রহমান। টুসি হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষুব্ধ সিরাজগঞ্জবাসীর বিক্ষোভ চলছে। আজ মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধনের মাধ্যমে ‘টুসি হত্যার’ বিচার চেয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। একই দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিক্ষোভ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিরাজগঞ্জ সমিতি।
এসব মানববন্ধনে টুসির স্বামী শামস এলাহী উইলিয়ামসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের সিরাজগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে সিরাজগঞ্জের মানুষ। গত ৫ মে রাজধানীর পূর্ব তেজতুরি বাজারের একটি ফ্ল্যাট থেকে টুসির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
টুসির পরিবারের অভিযোগ, টুসিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে হত্যার পর দড়িতে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গাজীউর রহমানের ছেলে টুসির স্বামী শামস এলাহী উইলিয়াম, শামসের বোন এটিএন বাংলার প্রযোজক ও উপস্থাপক কুইন রহমান ও শামসের মা লাইলী রহমানকে আসামি করে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
ঘটনার পর থেকে আসামিরা পলাতক বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সাইফুল বাশার।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। কলেজের ই্ংরেজি বিভাগ ওই মানববন্ধনের আয়োজন করে। টুসি এ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। মানববন্ধনে বক্তারা টুসি হত্যার তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কলেজের অধ্যক্ষ এস এম মনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক টি,এম সোহেল, গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা ফাহিমা সুলতানা, ইংরেজি বিভাগের প্রধান আবু বক্কার সাঈদ প্রমুখ।
এর আগে সকাল ১০টায় ইয়ং স্টার ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন, অধ্যাপক আকতার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ডার গাজী শফিকুল ইসলাম, প্রভাষক করুনা রানী সাহা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আসাদ উদ্দিন পবলু, জাহাঙ্গীর আলম রতন, আবু বকর ভুইয়া, নব কুমার কর্মকার, পিয়ার চৌধুরী, মির্জা মোস্তফা জামান, শামীমা ইয়াসমিন রীমা ও টুসির বাবা আশরাফুল বারী।
ওই মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন শহরের সর্বস্তরের মানুষ। শিক্ষক-আইনজীবী-শিক্ষার্থী-রাজনীতিবিদ-সমাজকর্মীসহ শত শত মানুষ হাতে হাত রেখে টুসির জন্য ন্যয়বিচার দাবি করেন। এসব মানুষের হাতে ছিল ব্যানার, প্ল্যাকার্ড। যেখানে টুসির ছবি ছিল, লেখা ছিল ‘টুসি হত্যার বিচার চাই।’ মানববন্ধনে বিপুল নারীর অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। কেবল নারী ও পুরুষ নয়, কোমলমতি শিশুরা নেমেছে পথে। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে টুসির জন্য ন্যয়বিচার দাবি করেছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হত্যাকারীরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যাতে করে টুসির মতো আর কোনো মেয়ের জীবন অকালে ঝরে না যায়। প্রয়োজন হলে সিরাজগঞ্জবাসী এ হত্যার বিচারের স্বার্থে আরো কঠোর কর্মসূচি দেবে বলেও এ মানববন্ধন থেকে ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে টুসির স্বামী শামস উইলিয়ামসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের সিরাজগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
এ সময় টুসির বাবা আশরাফুল বারী বলেন, ‘আমার মেয়ে টুসি একজন মেধাবী ছাত্রী ও সাংস্কৃতিককর্মী। সে সচেতন নারী হিসেবে কখনোই আত্মহত্যা করতে পারে না। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গাজীউর রহমানের ছেলে শামস এলাহী উইলিয়ামসের সাথে বিয়ের পর থেকেই টুসিকে শামস উইলিয়াম ও শামসের বোন এটিএন বাংলার প্রযোজক ও উপস্থাপক কুইন রহমান নির্যাতন করে আসছে। নির্যাতনের একপর্যায়ে টুসিকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়েছে। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত শামস উইলিয়াম ও তাঁর বোন কুইন রহমানকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কস্থ সিরাজগঞ্জ সমিতির আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (১৮ মে) রাত ৯টায় জ্যাকসন হাইটসের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে টুসি হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের জন্য বাংলাদেশে প্রশাসনের নিকট দাবি জানান।
এ সময় বক্তব্য দেন, নিউইয়র্কের সিরাজগঞ্জ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, টুসির চাচা সাইফুল বারী শফি, বিপু, ফয়সাল, রনি, বুলু, রেজা, লেবু, গণেশ ও মাকসুদা বারী তুহিন।