গোসল করে ফেরা হলো না রিফাতের
বাবা তুমি আম খাও। আমি ভাইয়ার সাথে গোসল করে আসছি। এসেই একসাথে ভাত খাব। - এ কথা বলে বাবার মুখে এক টুকরো আম তুলে দিয়ে সুগন্ধা নদীতে গোসল করতে যায় দুই ভাই সিফাত (১০) ও রিফাত (৭)। একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরে পানিতে নামে তারা। পানিতে ডুব দিতেই নদীর তীব্র স্রোতে বড় ভাইয়ের হাত ফসকে তলিয়ে যায় ছোট ভাই রিফাত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কাঠিপাড়া এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটার দুদিনেও খুঁজে পাওয়া যায়নি শিশু রিফাতকে। সুগন্ধা নদীতে শখের গোসল শেষে বাবার কাছে ফেরা হলো না তার।
ছোট ভাইকে পানিতে তলিয়ে যেতে দেখে চিৎকার করে বড় ভাই সিফাত। স্রোত তাকেও ভাসিয়ে নিলে স্থানীয় বৃদ্ধ আবদুস সোবাহান নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধার করেন।
নিখোঁজ ওই শিশুর বাবা ব্যবসায়ী খোকন মল্লিক জানান, ঢাকার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তাঁর একটি জুতার দোকান রয়েছে। অনেক দিন ধরে তাঁর দুই ছেলে নানাবাড়ি বেড়াতে যাবে বলে বায়না ধরে। তিনি গত ১৮ মে ফতুল্লা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নলছিটির কাঠিপাড়া গ্রামে নানা আনছার আলী হাওলাদারের বাড়িতে আসেন। বেড়ানো শেষে ২১ মে ফতুল্লা ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে তাঁরা যেতে পারেননি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লঞ্চে ওঠার কথা ছিল তাঁদের। এরই মধ্যে দুপুরে দুই ভাই সিফাত ও রিফাত নদীতে গোসল করতে নামে।
খবর পেয়ে ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি। দুদিন ধরে সুগন্ধা নদীর তীরে স্বজনরা রিফাতের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। নদীতীরে স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে গেছে। দিন-রাত ট্রলার নিয়ে তারা নিখোঁজ রিফাতের সন্ধান করছেন।
আজ শুক্রবার সকালে সুগন্ধা নদীতীরে কাঠিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ শিশুর বাবা ও মা নদীর দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন প্রিয় সন্তান ফিরে আসবে বলে। ক্ষাণিকক্ষণ পরপরই মা সিমু আক্তার ‘ও রিফাতরে ফিরে আয়’ বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। বাবা খোকন মল্লিককে ধরে আহাজারি করছেন স্বজনরা। নদীর দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে আছে নিখোঁজ রিফাতের বড় ভাই সিফাত। স্বজনদের আহাজারি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি প্রতিবেশীরাও।
প্রত্যক্ষদর্শী আবদুস সোবহান বলেন, ‘দুই শিশু গোসল করতে নামার সঙ্গে সঙ্গেই আমিও গোসল করতে আসি। এরই মধ্যে দেখি একজন আছে, অপরজন নাই। বড় ছেলেটা চিৎকার দিয়েই নিজেও পানিতে ভেসে যাচ্ছে। আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে রক্ষা করেছি। কিন্তু ছোট ছেলেটাকে খুঁজে পাইনি।’
রিফাতের বাবা খোকন মল্লিক বলেন, ‘আমার ছেলে রিফাত ফতুল্লার আদর্শপাড়া এলাকায় সেকান্দার আলী কিন্ডারগার্টেনের নার্সারিতে পড়ত। নানাবাড়ির গাছের তিনটি আম পেকেছে। রিফাত আমাকে আমগুলো পাড়তে বলে। আমি পেড়ে দিলে ওর মা সেগুলো কেটে দেয়। সিফাত ও রিফাত কয়েক পিস আম খায়। রিফাত আমার মুখে এক পিস আম তুলে দিয়ে সিফাতের সাথে গোসল করতে যায়। এই গোসলই রিফাতের শেষ গোসল বুঝতে পারি নাই। তাইলে ওদের ছাড়তাম না।’
স্থানীয় মড়র ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য ফেরদৌস ফকির বলেন, ‘আমরা দুদিন ধরে রিফাতকে নদীর তীরেই খুঁজে বেড়াচ্ছি। নলছিটি, ঝালকাঠি ও বরিশালে নদীতীরবর্তী লোকজনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কেউ তার সন্ধান পেলেই আমাদের জানাবেন।’