পাবনায় মেয়রসহ ৫ জন কারাগারে
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র আবদুল বাতেনসহ পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার দুপুরে পাবনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে আসামিরা জামিন প্রার্থনা করলে বিচারক আবদুল কুদ্দুস মিয়া তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কারাগারে পাঠানো অন্য চার আসামি হলেন, বেড়া পৌরসভার কাউন্সিলর ইসলাম উদ্দিন, আবদুস সামাদ মহলদার, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নার্গিস আক্তার ও হাটের ইজারাদার মাহবুব হোসেন বাবলু। এর আগে এই মামলায় আরো সাতজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মেয়র আবদুল বাতেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু ছোট ভাই। তিনি মিউনিসিপ্যালিটি অব বাংলাদেশের (ম্যাব) সভাপতি ও বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
দুদকের আইনজীবী আবদুর রহিম খান জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুদকের পাবনা অফিসের উপসহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে গত বছরের ২৭ আগস্ট ও ৩১ আগস্ট বেড়া পৌর মেয়র আবদুল বাতেনসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, বেড়া সিঅ্যান্ডবি করমজা নতুনহাটের প্রায় আড়াই কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আসামিরা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পাবনা বিশেষ জজ আদালতের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম। আর আসামিপক্ষে ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ বাবু, সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শহিদুল্লাহ হোসেন হেলাল, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট বেলায়েত আলী বিল্লু, অ্যাডভোকেট সনৎ কুমার সরকারসহ অর্ধশত আইনজীবী।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন বেড়া পৌরসভার প্রকৌশলী খন্দকার ফিরোজুল আলম, সাবেক সচিব বর্তমানে পঞ্চগড় পৌরসভার সচিব মো. রাশিদুর রহমান, কাউন্সিলর যথাক্রমে হাবিবুর রহমান হবি, আবু দাউদ শেখ, জয়নাল আবেদিন, শামসুল হক খান, এনামুল হক শামিম, আব্দুর রাজ্জাক সরদার, ইসলাম উদ্দিন, আবদুস সামাদ মহলদার, শহিদ আলী, নার্গিস আক্তার ও মোছা. জাকিয়া খাতুন এবং হাটের ইজারাদার মাহবুব হোসেন বাবলু, চাটমোহরের উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম সরওয়ার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গঙ্গা ব্যারেজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম, পাবনার সাবেক জিপি অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন সবুজ, বেড়া পাউবোর তৎকালীন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী আবদুল আজিজ খান ও সাবেক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাজু আহমেদ।
দুদকের পাবনা কার্যালয়ের সাবেক উপসহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, গত বছরের ২৭ আগস্ট বেড়া থানায় সাড়ে ৭৬ লাখ টাকা এবং দুই লাখ তিন হাজার সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বেড়া পৌর মেয়র আবদুল বাতেনসহ ১৪ জনের নামে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। তদন্তে এই মামলা দুটিতে আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে এক কোটি ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার ৯৫ টাকা এবং ৪৭ লাখ ১২ হাজার ২৫০ টাকা। এ ছাড়া একই বছরের ৩১ আগস্ট দায়ের করা অপর আরো একটি মামলা তদন্তের পর দুটি মামলায় পরিণত হয়। এখানে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, বেড়া পৌর মেয়র আবদুল বাতেনসহ উল্লেখিত আসামিরা নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি হাটকে বেসরকারি ব্যক্তি মালিকানাধীন দেখিয়ে এক বছরের স্থলে এক নাগারে ১৩ বছর অবৈধভাবে ভোগদখল করে সরকারের বিপুল রাজস্বের ক্ষতি করে ব্যক্তিগত লাভবান হয়েছেন। বিধি মোতাবেক সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেননি।
দুদক কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন অনুসন্ধানের পর সত্যতা পাওয়ায় গত ২৩ মার্চ পাবনার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে চারটি পৃথক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। যার নম্বর ৫২, ৫২ (ক) ৫৩, ৫৪। অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. রেজাউল করিম অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট বেলায়েত আলী বিল্লু বলেন, ‘করমজা নতুনহাট নিয়ে কিছু অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু কোনো দুর্নীতি হয়নি। আমরা উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেব।’