রাজাকারের শাস্তি ছেলে ভোগ করবে কেন?

মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নাগরিকত্ব আইন বিষয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদূল আমিন চৌধুরী বলেছেন, ‘শুনেছি এটি সংসদে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এ বিষয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ দেখেছি, তা খুবই বিপজ্জনক। যেকোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে পারবে সরকার।’
‘রাজাকারদের নাগরিকত্ব বিষয়ে ওই আইনে আছে, একজন রাজাকার যদি থাকে তার সম্পদ তার ছেলেমেয়েরা পাবে না। রাজাকাররা তো চলে গেছে ৪০-৪২ বছর আগে। আমরা যেভাবে চলছি তাতে তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে হচ্ছে। বাবার শাস্তি ছেলে ভোগ করবে কেন? ফৌজদারি আইনে একজনের শাস্তি আরেকজন ভোগ করতে পারে না। গণতান্ত্রিক সরকারে এসব থাকার কথা নয়, জনগণের জন্য আইন হওয়ার কথা। এ বিষয়ে ভেবে দেখা উচিত, আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সুপ্রিম কোর্ট শাখা আয়োজিত সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিরাজমান পরিস্থিতি শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের রায় লেখা প্রসঙ্গে মাহমুদূল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সময় নিয়ম ছিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকরা এজলাসে বসে রায় ঘোষণা করবেন, আইনজীবীরা বসে শুনবেন, কোনো কিছু বাদ গেলে তা বলবেন। আর আপিল বিভাগ শুধু আদেশ অংশ ঘোষণা করতেন। পূর্ণাঙ্গ রায় আসবে পরে। তাই আমি মনে করি না যে অবসরের পর রায় লেখা বেআইনি হবে। তবে অবসরের পর রায় লিখতে হলে কোনোভাবেই আদেশ অংশ পরিবর্তন করা যাবে না। আদেশ অংশ পরিবর্তন করতে হলে রিভিউ করতে হবে। এটা না করে ছয় মাস পরে, এক বছর পরে, দেড় বছর পরে যদি কেউ রাতের অন্ধকারে রায়ের আদেশের অংশ পরিবর্তন করে তবে সেটি হবে ফৌজদারি অপরাধ। আমরা তো সেটা করলাম, সেটি ঠিক হয়নি। এ কারণেই প্রধান বিচারপতি বলছেন, এটা বেআইনি।’ অবসরের পর রায় লেখা নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘এখন তো শুনি হাইকোর্টে কেউ কেউ প্রকাশ্য আদালতে রায় দেন না, সংক্ষিপ্ত আদেশ দেন। আগে এটা ছিল না, এখন মাসের পর মাস পূর্ণাঙ্গ রায় দেওয়া হয় না। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি হয়, জজসাহেব সম্পর্কে নানা আলাপ-আলোচনা হয়, তিনি রায় লিখতে পারেন না বলেই প্রকাশ্যে রায় বা আদেশ দেন না। এখন নাকি রুল দেওয়া নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র বিতর্ক হয়, সিনিয়র এজলাস থেকে নেমে যান, এটি দুঃখজনক-লজ্জাজনক। এ জন্য দায়ী আইনজীবীরা। কারণ আইনজীবীদের দায়িত্ব কাউকে খালাস করে দেওয়া বা কাউকে শাস্তি দেওয়া নয়। তাদের দায়িত্ব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতকে সহায়তা করা।’
মাহমুদূল আমিন চৌধুরী আরো বলেন, ‘এখন তো শুনি একেকজনের কাছে এক দেড়শো মামলা রয়েছে রায় লেখার অপেক্ষায়। এটা দুঃখজনক। একেকজনের কাছে এই বিপুল পরিমাণ রায় লেখার অপেক্ষায় থাকার কারণে বিচার বিভাগ ও সুপ্রিম কোর্টের সর্বনাশ হয়েছে। এ রায় লেখা পড়ে থাকার জন্য দোষ আইনজীবীদের। আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। বিচার বিভাগকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু আইনজীবীরা তা করছেন না।’
আইনজীবীদের উদ্দেশে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা রাজনীতি করবেন কিন্তু তা আদালতের বাইরে। আদালত অঙ্গনে আপনাদের পরিচয় আপনারা আইনজীবী। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আপনারা কাজ করবেন। জুডিশিয়ারি বাঁচাতে হলে আপনাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ড. শাহদীন মালিক, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বক্তব্য দেন।