কাউন্সিলর পদে লড়ছেন তৃতীয় লিঙ্গের দিতি
‘মনে রাখবেন কেউ কারো অধিকার দেয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। আমাদের নিয়ে অবহেলার জবাব দিতেই আমি প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনে জিতলে আমি তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হব। সব সময় থাকব গরিব আর অবহেলিত মানুষের পক্ষে।’
কথাগুলো সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থী দিতির। তিনি তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষ। সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে চান দিতি।
কলারোয়া পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানিয়েছেন, পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়বেন দিতি।
আজ রোববার বিকেলে কথা হয় দিতির সঙ্গে। তিনি বলেন, নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ কারো কারো ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের বিরূপ মন্তব্যও করছেন।
দিতি জানালেন, ‘তবে বিপরীতে আছে ভালোবাসাও। এলাকার গরিব, অবহেলিত মানুষই আমাকে বলেছেন নির্বাচনে অংশ নিতে। আর এই শক্তি নিয়েই লড়াই করতে চাই।’
দিতি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এবারই প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আগে কখনো ভাবিনি নির্বাচন করব। কিন্তু যখন দেখলাম দরিদ্র মানুষের ত্রাণ, সাহায্য ধনী মানুষরা খেয়ে ফেলছে, তখন আর নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি।’
দিতি আরো বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমি নিজে একজনকে দাঁড় করিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি জনগণের সেবা করেননি। জনগণ আমাকে বলেছে, এবার আপনি দাঁড়ান, আমরা আপনাকে সমর্থন দিতে চাই। আপনি দরিদ্র মানুষের পাশে থাকবেন।’
‘আমি জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ, নির্বাচিত হলে আমি তাদের সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাব। দরিদ্ররা যাতে তাদের পাওনা পেতে পারে আমি সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাব। আমার মা আমার জন্য দোয়া করেছেন।’ বলছিলেন দিতি।
দিতি আরো বলেন, ‘আমরা (তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ) তো এই সমাজের বাইরের কেউ নই। এ দেশের মানুষ তো আমরাও। তাহলে কেন আমাদের প্রতি এতটা বৈষম্য। নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে। তাঁরাই আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস আমিও জনপ্রতিনিধিত্ব করতে পারি।
দিতি ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ তাঁকে সমর্থন দিয়ে প্রচারে সাহায্য করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দিতির সঙ্গী সীমা, অপু, নদী, নূপুর ও পায়েল জানান, তাঁরা দিতির পক্ষে কাজ করছেন। তাঁরা সবার কাছে যাচ্ছেন। দিতি প্রার্থী হওয়ায় তাঁরা সবাই বেশ আনন্দিত।
প্রচারে গিয়ে কোনো রকম বাধা বা অবহেলার মুখোমুখি হচ্ছেন কি না জানতে চাইলে দিতি ও তাঁর সঙ্গীরা বলেন, বাধা তো দূরের কথা সাধারণ জনগণ তাঁদের সহায়তা করছেন। তাঁরা উৎসাহ দিচ্ছেন।
দিতি জানালেন, সীমা নামে একজন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য যশোরের বাঘারপাড়া পৌরসভায় কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন।