অগ্নিকাণ্ডে কী পরিমাণ ইভিএম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে বেজমেন্টে যে জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) গুদাম ছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে অগ্নিকাণ্ডে ইভিএমের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি ইসি। তারা বলছে, তদন্তের পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে।
গতকাল রোববার রাত ১১টা ৬ মিনিটে ১২ তলাবিশিষ্ট নির্বাচন ভবনের বেজমেন্টে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাত ১২টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুন লাগার খবর পেয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নির্বাচন কমিশনাররা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁরা জানান, যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে ইভিএম, এলইডি মনিটরিং, ট্যাব ছাড়াও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ছিল।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন ও ফায়ার সার্ভিস দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে তদন্ত কমিটির সদস্য ও ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনু বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ইভিএমের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দেড়শর মতো ইভিএম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তদন্ত শেষ করার পর বিস্তারিত বলা যাবে।’
আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। বৈদ্যুতিক ও এসির সংযোগস্থলে এ ঘটনা ঘটতে পারে।’
তবে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান সকালে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দেড়শর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গুদামে প্রায় চার হাজার ইভিএম মেশিন ছিল। আগুন নেভানোর জন্য প্রচুর জল দেওয়া হয়েছে। এতেও কিছু মেশিন নষ্ট হতে পারে। অগ্নিকাণ্ডেও কিছু মেশিন নষ্ট হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
আগুন নিয়ন্ত্রণের পর গভীর রাতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, নির্বাচন কমিশনের সচিব মোহাম্মদ আলমগীর ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্মণ বলেন, ‘এখানে ইভিএমের গুদাম ছিল। মূলত এই গুদামেই আগুন সীমাবদ্ধ ছিল। আপনারা জানেন, এটা খুবই বায়ুরোধী। বাতাসও ঢোকার ব্যবস্থা নেই। যখন আমরা গ্লাসগুলো খুলে দিই এবং ওপরের ভেন্টিলেশন খুলে দিই, তারপরই আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।’
যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে কী পরিমাণ ইভিএম ছিল—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব মোহাম্মদ আলমগীর সঙ্গে থাকা অন্য একজন কর্মকর্তার সাহায্য নিয়ে বলেন, ‘সাড়ে চার হাজারের মতো ইভিএম আছে সেখানে। বিভিন্ন জায়গায়, এক জায়গায় না। যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে হয়তো অল্প কিছু থাকতে পারে।’
রাত দেড়টার দিকে সবাইকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এ সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ভবনের বেজমেন্টে কী কী জিনিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? আমরা জানতে পেরেছি, সেখানে ইভিএম মেশিন ছিল, এনআইডির যন্ত্রপাতি ও নথি ছিল।
তখন জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘সেখানে কী ছিল, এটা আমি এখন বলতে পারব না। আমরা শুধু পরিদর্শন করেছি৷ কী ছিল, না ছিল আমার পক্ষে এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিলে তখন জানা যাবে ভবনের বেজমেন্টে কী কী ছিল। আর কী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এ ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ কত হতে পারে।’
‘তবে সেখানে কিছু কিছু যন্ত্রপাতি আছে, সেগুলো আগুন নেভানোর সময় পানিতে ভিজেছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আমরা সেগুলো আজ রাতেই সরিয়ে নেওয়ার জন্য এনআইডির ডিরেক্টর জেনারেলকে অনুরোধ করেছি,’ যোগ করেন মাহবুব তালুকদার।