‘বিরল’ রোগে আক্রান্ত শিশু মুনিরার যন্ত্রণাময় জীবন
চাঁপাইবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার গোডাউনপাড়ার শিশু তাসফিয়া জাহান মুনিরা বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করছে। জন্মের পর থেকে মুনিরা এ রোগযন্ত্রণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত ভাবিষ্যতের দিকে। অথচ অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার।
মাত্র চার বছর তিন মাস বয়সী সদা হাস্যোজ্জ্বল শিশুটি আর পাঁচটা শিশুর মতোই চলাফেরা করলেও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে যন্ত্রণাময় বিরল এক রোগ। জন্মের মাত্র চার মাসের মাথায় শিশুটির পিঠের দিকে চামড়ায় চিড় ধরে এবং টিউমারের মতো একটি অংশের সৃষ্টি হয়। কালচে বর্ণের ওই টিউমার অংশে লোম বের হওয়া শুরু হয়, যা পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো শরীরে। জামাপরা অবস্থায় বাইরে থেকে বোঝার উপায় না থাকলেও লোমশ স্থানগুলোতে হয় প্রচণ্ড যন্ত্রণা। রাত নামলেই যন্ত্রণায় ছটফট করে ফুটফুটে শিশুটি। দিনে দিনে লোমশ অংশ যেমন শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে তেমনি টিউমারের মতো অংশটাও বড় হওয়ায় আতঙ্ক তাড়া করছে শিশুটির পরিবারকে।
এ ব্যাপারে শিশু মুনিরার মা তানজিলা খাতুন বলেন, “আমার মেয়ের বয়স যখন ছয়দিন তখন তার সারা শরীর ফেটে যায়। রস বের হতো, গন্ধ করত। আমরা বাচ্চাকে নিয়ে রাজশাহী গেলাম। সেখানে ওষুধ দিল, খাওয়ালাম। কিন্তু ভালো হয় না। তখন আবার নিয়ে গেলে তারা বলল, ‘আপনার বাচ্চাকে নিয়ে যান। আমরা এর চিকিৎসা করাতে পারব না। আর এর চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হবে।’ এখন দিন দিন অসুখটা বাড়ছে। ওর পিঠে একটা বড় টিউমার আছে। ওটার জন্য বেশি চিন্তা। প্রচণ্ড ব্যথা করে। দিন দিন সেটা বড় হচ্ছে।”
শিশু মুনিরার বাবা মাসুদুজ্জামান মামুন পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পেরে এখন হোমিও চিকিৎসা করাচ্ছেন।
শিশুটির বাবা মাসুদুজ্জামান মামুন তাঁর অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে বলেন, “আস্তে আস্তে যত দিন যাচ্ছে রোগটা তত বাড়ছে। মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ছে। আর চিকিৎসকরা বলেছিলেন, অনেক টাকা খরচ হবে। তোমরা একটা কাজ করো বাচ্চাটিকে নিয়ে ঢাকার পিজি হাসপাতালে যাও।’ তখন বলেছিলাম, টাকা কত খরচ হতে পারে? তখন তারা বলেছিল, ‘লাখ দেড়েক টাকা লাগবে।’ আমি তো দিনমজুরি করি। আমার পক্ষে তো এত টাকা খরচ করা সম্ভব নয়। আল্লাহর কাছে আমি দুটি মেয়ে বাচ্চা চেয়ে নিয়েছিলাম। আমার কিন্তু কোনো বোন নাই। এই দুটি মেয়েকে নিয়েই আমার ভবিষ্যৎ। বাচ্চাটার জন্য আপনারা যেটুকু পারেন সহযোগিতা করেন, যেন একটু চিকিৎসা করাতে পারি। আমার কাছে কোনো টাকাপয়সা নেই। আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
এ ব্যাপারে নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুলতানা পাপিয়া বলেন, ‘এটার ডাইনোসিসটা যেটা করেছিল বাংলাদেশে তিন বছর আগে, সেটার প্রধান নাম হচ্ছে জায়ান্ট হেয়ারি নেভার। এটার একটা সিস্ট আছে, যেটা ধীরে ধীরে বিস্তার হচ্ছিল। এটা একটা আনকমন কেইস। আর এই রোগটা হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদি। এই ধরনের রোগের জন্য স্পেশালাইজড হাসপাতালগুলোতে সাধারণত স্থানান্তর করা হয়।’