বনানীর অগ্নিকাণ্ডে একই প্রতিষ্ঠানের দশজন নিহত!
রাজধানীর বনানীর ৩২ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর এফ আর টাওয়ারের ১১তলায় ছিল ট্রাভেল এজেন্সি হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেসের কার্যালয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ডের সময় কর্মরত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ২০ জন। এঁদের মধ্যে ১০ জনই মারা গেছেন অগ্নিকাণ্ডের পর। নিহতদের মধ্যে এক দম্পতিও রয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তাঁরা এনটিভি অনলাইনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে আজ শনিবার পর্যন্ত ২৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ১০ জনই হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেসের।
প্রতিষ্ঠানটির বিমানবন্দর শাখার ব্যবস্থাপক জালাল ভূঁইয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বনানীর অফিসে আমাদের ২০ জন কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন। ওই ভবনে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ১০ জন ভবনটির উপরে উঠে যান। কিছু সময় পর চারিদিকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে বাকি ১০ জন আর উপরে উঠার সুযোগ পাননি। এতে তাঁরা সবাই নিহত হয়েছেন। এই ১০ জনের ভেতরে পাঁচজন ভবনের ইন্টারনেটের তার বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু নিচে ছিটকে পড়ে মারা যান তিনজন। বাকি দুজন কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান। আর ভবনের ভেতরে আগুনে পুড়ে মারা যান তিন নারীসহ ছয়জন। ওই ঘটনায় আহত প্রতিষ্ঠানের মুফতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল আজ মৃত্যুবরণ করেন হাসপাতালে।’
জালাল ভূঁইয়া আরো বলেন, ‘এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার আগেও কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আগুন লাগার পরও কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের কিছুই যে আর করার ছিল না। আমরা কখনো কল্পনায় করিনি আমাদেরই ১০ জন সহকর্মী এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। আমরা বাকরুদ্ধ, কী ঘটে গেল এটা!’
এ সব ব্যাপারে জানতে চাইলে হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়জুল ইসলাম হিরু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা শোকাহত, বাকরুদ্ধ! আমি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। একই সঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিহত কর্মীদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করব। যার পরিবারের আর্থিক অবস্থা যেমন তার পরিবারকে সেই অনুযায়ী সহায়তা করা হবে।’
ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘তবে কী পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে তা এখনো ঠিক করা হয়নি। আমরা দ্রুতই ম্যানেজমেন্ট বডির সঙ্গে বসব এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। এছাড়াও আমাদের এজেন্সি ব্যবসায়ীদের সংগঠন আটাবের (অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ) পক্ষ থেকেও তাঁদেরকে অনুদান দেওয়া হবে। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি যাতে করে নিহত পরিবারগুলোকে তিনি আর্থিক অনুদান দেন।’
যে দশজনকে হারাল হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস
অগ্নিকাণ্ডে হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেসের যে দশজন নিহত হয়েছেন তাঁরা হলেন মাকসুদুর রহমান জেমি (সিনিয়র ট্যুর অপারেটর) ও তাঁর স্ত্রী রুমকী আকতার (অ্যাকাউন্টস অফিসার), আবদুল্লাহ আল মামুন (অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার), মুফতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল (হজ ও ওমরাহ অফিসার), নাহিদুল ইসলাম নাহিদ (সিনিয়র সেলস অফিসার), আতাউর রহমান (সিনিয়র সেলস অফিসার), মুনীর হোসেন সরদার (সিনিয়র সেলস অফিসার), মিজানুর রহমান (ভিসা কো-অর্ডিনেটর), তানজিলা মৌলি (ট্যুর অপারেটর) ও জেবুন্নেসা (ভিসা কো-অর্ডিনেটর)।