চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না
রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরও পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, কেন অতিদ্রুত কেমিক্যাল গোডাউন সরানো হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এ ছাড়া ২০১০ সালে নিমতলীতে আগুনের ঘটনার পর অগ্নিকাণ্ড রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন না করায় সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মামলার বিবাদী মন্ত্রিপরিষদ সচিব,আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত পৃথক চারটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জেড আই খান পান্না, ইউনুস আলী আকন্দ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও মো. রিয়াজ উদ্দিন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সাগুফতা তাবাসসুম ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ, অমিত দাস গুপ্ত, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নূর মোহাম্মদ আজমী ও খন্দকার মো. সায়েদুল কাউছার এবং সাগুফতা তাবাসসুম হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক চারটি রিট দায়ের করেন।
এসব রিটে হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানা অপসারণ ও বিক্রির উদ্দেশে মজুত করা গ্যাস সিলিন্ডার অপসারণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিমতলী ট্র্যাজেডির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনাও চাওয়া হয়।
এসব রিটের শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘রাজধানীর চকবাজারে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে। আগুনে মানুষ পুড়ে মরে,তাহলে সিটি করপোরেশন কী করে? শুধু আন্তরিক হলে হবে না, কাজ করতে হবে। এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না। এটা অবহেলা। এর দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে। একজন দায়িত্বশীল আরেকজনের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন এটা ঠিক না।’
গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে পরের দিন সকাল পর্যন্ত জ্বলতে থাকা আগুনের ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হয় আরো প্রায় অর্ধশত।
যা আছে ১৭ দফায়
নিমতলীর ঘটনার পর ১৭ দফায় বলা হয়, জরুরি ভিত্তিতে আবাসিক এলাকা থেকে গুদাম বা কারখানা অপসারণ; অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা; অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ ও ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিত; রাসায়নিক দ্রব্যের মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রির জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে তদারকি প্রক্রিয়া জোরদার; আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক বা রিস্ফোরক দ্রব্যের মজুদ বা বিপণনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন; দ্রুত অগ্নিনির্বাপণের জন্য স্থানীয়ভাবে পৃথক পানির লাইনসহ হাইড্রেন্ট পয়েন্ট স্থাপন; আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক বা বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ মজুতকরণ বা বিপণন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ; বাড়িঘরে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তারের গুণগত মান নিশ্চিত; রাস্তায় স্থাপিত খোলা তারের ব্যাপারে সাবধানতা; সম্ভাব্য দুর্ঘটনা পরিহার করতে মাসে অন্তত একবার ট্রান্সফরমার সরেজমিনে পরীক্ষা; দুর্ঘটনা মোকাবিলায় জাতীয় পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন; রাসায়নিক ও রাসায়নিক জাতীয় দাহ্য বস্তুর আলাদ দফতরের পরিবর্তে সব দফতরের মধ্যে সমন্বয়; সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের অবকাঠামো, জনবল, প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামের আধুনিকায়ন ও সচেতনতা বাড়ানো; অগ্নিকাণ্ডের সময় যেন উৎসুক জনতা উদ্ধারকাজে বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো; পাঠ্যসূচিতে অগ্নিকাণ্ড, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয় বাধ্যতামূলক করা; ৬২ হাজার কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ডেকোরেটরের উপকরণের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার কথা বলা হয়েছে।