‘সুন্দর খেলা হোক, যে পারে কাপ নিক’
রাশিয়ার ফুটবল ময়দানে বাংলাদেশ নেই। তাতে কী? জনপ্রিয় ফুটবল দলগুলোর প্রতি বাংলাদেশি সমর্থকদের উন্মাদনা এবং আবেগের একটুও কমতি নেই। নিজের পছন্দের দল জেতানো কিংবা খেলা সংক্রান্ত আড্ডায় থাকে সমর্থনের কট্টর মনোভাব। তবে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে অনেকেই চায় একটি নান্দনিক বিশ্বকাপ দেখতে। চায়, ভালো খেলা দলগুলোই থাকুক শেষ পর্যন্ত। ফুটবলের মাঠ হয়ে উঠুক ছন্দময়।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতির কল্যাণে ফুটবলের বারোমাসি আবহ অনেকটা ফ্যাকাসে হলেও চার বছর পর ঠিকই জ্বলে ওঠে এ দেশে বিশ্বকাপ উন্মাদনা। চায়ের আড্ডায়, রাস্তায়, অফিসে কিংবা হাঁটে-মাঠে সর্বত্রই লেগেছে বিশ্বকাপের ছোঁয়া। বরং ফুটবলীয় উন্মাদনা নেই এমন স্থান খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
তর্ক-বিতর্ক, বাকবিতণ্ডা, কাদা ছোড়াছুড়ি আর আবেগ-ভালোবাসায় যেন পরিপূর্ণ এক বিশ্বকাপ। গ্রুপ পর্বের খেলা শেষ। এরই মধ্যে বেশ জমে উঠেছে বিশ্বকাপের আসর। রাশিয়ার মাটি থেকে বিশ্বকাপ উত্তাপ ছড়াচ্ছে সুদুর বাংলাদেশের আকাশ পর্যন্ত! সর্বত্রই চলছে আলোচনা কিংবা সমালোচনা।
চায়ের আড্ডায় কিংবা অফিসের খোশগল্পে কট্টর সমর্থকদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। নিজের দলের হার-জিত নিয়ে কথার লড়াই চলছে। এ ধরনের সমর্থক গোষ্ঠী কিন্তু সব দলেই বিরাজমান। কট্টর সমর্থক গোষ্ঠীর অনেকে এসবের ঊর্ধ্বে উঠে একটি ছন্দময় বিশ্বকাপ দেখতে চায়।
কেমন বিশ্বকাপ চান কিংবা কেমন হওয়া উচিত—এমন প্রশ্নে অনেকের সঙ্গেই কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তাঁদের ভেতরে একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা আকাশী মণ্ডল নামের একজন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা হয়তো নিজের দলের পক্ষে তর্কের খাতিরে তর্ক করি। কখনো কখনো কথাকাটাকাটিও করি বন্ধুদের সঙ্গে। কখনো বুঝে, কখনো হয়তো না বুঝে। এসব অবশ্য খেলার উন্মাদনারই অংশ।’
এই শিক্ষিকা আরো বলেন, ‘আপনি ভালো করে খেয়াল করে দেখবেন, নিজের পছন্দের দল খারাপ খেলে হেরে গেলে খুব একটা খারাপ লাগে না। অন্তত সান্ত্বনা পাই, যারা ভালো খেলেছে, তারা জিতেছে। কিন্তু ভালো খেলেও গোল দিতে পারল না, এটা মেনে নেওয়া কঠিন। এবং এটার জন্য ভীষণ খারাপ লাগে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, নিজের দল হারলে বন্ধুদের সামনে গেলে বিভিন্ন রকম উসকানিমূলক কথা শুনতে হয়। তবে এসব বাইরের। ভেতরের কথা হলো যারা ভালো খেলবে, তারাই জিতুক। নান্দনিক-সুন্দর খেলা হোক, যে পারে সে কাপ নিক।’
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জমান আরজু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি চাই একটি নান্দনিক বিশ্বকাপ দেখতে। খেলাটাকে উপভোগ করতে চাই। যারা ভালো খেলবে, তারাই কাপ নেবে। খেলা যেহেতু একটি বিনোদনের মাধ্যম, সেহেতু পুরোদস্তুর সুষ্ঠু বিনোদনটা বিশ্বকাপ থেকেই নিতে চাই।’
জহুরুল ইসলাম নামের একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘বিশ্বকাপ একটা বড় মঞ্চ। বিশ্বের সেরা দলগুলো এখানে খেলে থাকে। এককভাবে এখানে কাউকে ফেভারিট ভাবার কোনো উপায় নেই। যে কারো সক্ষমতা আছে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার। অন্যদিকে, বিশ্বকাপ এলেই ফুটবলপ্রেমীরা নানা শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের সমর্থক বেশি। অতি কট্টরভাবে নয়, সংযত হয়েই নিজের পছন্দের দলকে সমর্থন করা উচিত।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা সেমি অথবা ফাইনালে খেলুক। একবার অন্তত দেখতে চাই দুদলের নান্দনিক খেলা। আর তারা বিশ্বকাপে একসঙ্গে খেললেই চমৎকার একটি খেলা উপভোগ করার সুযোগ তৈরি হবে।’
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আরিফা খানম বলেন, ‘ফুটবলকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য হলেও ভালো খেলে মেসির একটি কাপ অন্তত জেতা উচিত। মেসির মতো একজন খেলোয়াড় ভালো খেলবে না, তা হয় না। তবে রোনালদোও কিন্তু একজন ভালো খেলোয়াড়। তারও একটি কাপ নেওয়া উচিত। আমি চাইব আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পর্তুগাল ও স্পেন খেলুক সেমিফাইনাল পর্যন্ত। তাহলে জমে উঠবে বিশ্বকাপের আসর।’
কাজীপাড়ার কবীর হোসেন নামের একজন মুদি দোকানদার বলেন, ‘আমি বরাবরই ব্রাজিল সাপোর্ট করি। আমি চাইব ব্রাজিল জিতুক। তবে ভালো খেলে জিতুক, সেটা চাইব। আর ব্রাজিলের থেকেও যদি অন্য কোনো দল ভালো খেলে, তবে তারাও বিশ্বকাপের দাবিদার হতে পারে।’
রিকশাচালক আলী হোসেন বলেন, ‘আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্ট করি শুধু মেসির জন্য। হের উচিত একখান কাপ জেতা। তবে রাতভর রিকশা চালাই বলে সুযোগ হয় না খেলা দেখার। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের খেলা দেখি। যে দলই কাপ নিক, খেলাটা ভালো হোক।’