প্রধান শিক্ষকের দুই লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অডিও ফাঁস!
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ ও দুই লাখ টাকা খরচের কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়েছে। অষ্টমনিষা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনছার আলী ও চাকরিপ্রার্থী মো. জিল্লুর রহমানের মধ্যে কথোপকথনের এই অডিও কয়েকদিন ধরে চাকরিপ্রার্থীরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। অডিও ফাঁসের পর এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মো. জিল্লুর রহমানকে ভাঙ্গুড়ার অষ্টমনিষা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ কথা চলছে। আর এজন্য তাঁর কাছে দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা চান ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনছার আলী। সে জন্য জিল্লুর রহমান প্রধান শিক্ষককে ওই টাকা পরিশোধ করেন। ফাঁস হওয়া কথোপকথনের অডিওতে এই বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। টাকা গ্রহণ করার পরও তাঁকে চাকরি দেন প্রধান শিক্ষক।
এদিকে চাকরি না পেয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন জিল্লুর রহমান। অডিওতে তাঁর দেওয়া দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষকের কাছে তিনি ফেরত চান। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আনছার আলী তা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
১৫ মিনিটের বেশি সময় ওই কথোপকথনে প্রধান শিক্ষক ২ লাখ ১৫ হাজার টাকাকে প্রথম দিকে ২ টাকা ১৫ পয়সা বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘১ টাকা ৫০ পয়সা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে দিয়েছি এবং ৪৮ হাজার টাকা সভাপতি আমাকে দিয়ে খরচ করিয়েছেন। তাহলে প্রায় দুই টাকা শেষ হয়ে গেল না? কিন্তু ১৫ টাকা আমার কাছে অমিল লাগছে।’
নিয়োগ কি হাতে থাকবে চাকরি প্রার্থী জিল্লুর রহমানের এমন প্রশ্নের পরে আনছার আলী বলেন, ‘সকল কিছুই হেডমাস্টারের হাতে থাকে । কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া এনটিআরসির হাতে চলে যাওয়ায় আমার কিছুই করার নাই।’ টাকা ফেরত চাইলে তিনি বলেন, ‘সব টাকা শেষ হয়ে গেছে, এখন আমার আর করার কিছুই নাই।’
এ দিকে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেও আমাকে নিয়োগ দেননি । এখন আমার টাকা ফেরত চাই।’
এ বিষয়ে অষ্টমনিষা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনছার আলী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এটা একটা ষড়যন্ত্র। তবে আমি যেটা করেছি তা সভাপতির পরামর্শে করেছি।’ অডিওতে নিজ কণ্ঠে বলা কথা নিজের বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে অষ্টমনিষা উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বসে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু জিল্লুর রহমান যে টাকা দিয়েছেন তাঁর প্রমাণ দিতে পারেননি।’
এ ব্যাপারে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মুল বানিন দ্যুতি বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা হবে। ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’