অডিটরের বাড়িতে পাওয়া ৯২ লাখ টাকা ট্রেজারিতে
কিশোরগঞ্জে উদ্ধার হওয়া সরকারি তহবিল থেকে আত্মসাতের ৯২ লাখ টাকা আদালতের নির্দেশে সরকারি ট্রেজারিতে জমা দেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থিত ট্রেজারিতে এই টাকা জমা দেয়।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ জেলার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে উদ্ধার হওয়া টাকার বিষয়টি উপস্থাপন করেন। এ পর্যায়ে বিচারক মো. জসিম উদ্দিন উদ্ধার হওয়া টাকা ট্রেজারিতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এই আদেশের পর ট্রেজারি কার্যালয়ে ট্রেজারি অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মো. সাঈদ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদের কাছ থেকে টাকা গুনে বুঝে গ্রহণ করেন। এ সময় জেলা ট্রেজারার মো. জামাল উদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মচারী এবং দুদকের দুই সহকারী কমিশনার ফজলুল বারী ও মো. মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে জেলা শহরের কাতিয়ারচর এলাকায় অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানের বাড়ি তল্লাশি করে ৯২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণের সরকারি তহবিলের পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের মামলায় আটক সৈয়দুজ্জামান বর্তমানে কিশোরগঞ্জ কারাগারে রয়েছেন।
টাকা উদ্ধার ও ট্রেজারিতে জমাদানের সত্যতা নিশ্চিত করে দুদক ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, উদ্ধার করা টাকা ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের সরকারি তহবিলের আত্মসাৎ হওয়া টাকার অংশ বলেই দুদকের ধারণা। মূল অভিযুক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলাম ও ট্রেজারির অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় পরস্পরের বাসায় আসা-যাওয়া ছিল। এই ঘনিষ্ঠতার কারণেই আত্মসাতের একটি অংশ ট্রেজারির অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানের বাসায় রাখা হয়।
ভূমি অধিগ্রহণের সরকারি তহবিলের পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলামকে গত ১৭ জানুয়ারি গ্রেপ্তার ও মামলা দায়ের করে দুদক। গ্রেপ্তারের পর পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে সেতাফুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর, সহকারী ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম এবং জেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান ও অফিস সহায়ক মো. দুলাল মিয়াসহ আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে টাকা আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে তাঁরাও জড়িত বলে জানান। এর মধ্যে টাকা আত্মসাতের কাজে সহায়তা করার জন্য অডিটর সৈয়দুজ্জামানকে পাঁচ লাখ আর অফিস সহায়ক দুলাল মিয়াকে এক লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জানান।
সেতাফুলের দেওয়া জবানবন্দির সূত্র ধরে গত ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান ও পিয়ন দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তিনদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁরা দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাঁর ভিত্তিতে সৈয়দুজ্জামানের বাসায় অভিযান চালিয়ে আত্মসাৎ করা ওই টাকা উদ্ধার করা হয়।
দুদকের মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য কিশোরগঞ্জে কয়েকশ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এসব ভূমির মালিককে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার সময় জালিয়াতির আশ্রয় নেন কিশোরগঞ্জের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলাম। জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে চেকের মধ্যে সেতাফুল ইসলাম পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া ঘটনা জানতে পেরে শেষ মুহূর্তে আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় থাকা আরো নয় কোটি টাকার চেক জব্দ করে জেলা প্রশাসন।