প্রধান শিক্ষিকাকে পেটালেন আ.লীগ নেতা ও তাঁর ছেলে
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য আসা বরাদ্দের ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতার হাতে তুলে না দেওয়ায় প্রধান শিক্ষিকাকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বুধবার ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চরশ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
এতে ডৌহাখলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ ও তাঁর ছেলে বাবু মিয়ার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষিকা মারধরের অভিযোগ করেছেন বলে গতকাল শনিবার এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান।
ওসি আরো জানান, প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগ আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবু সাঈদ গৌরীপুর উপজেলার মোজাফ্ফর আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি চরশ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
অভিযোগের বরাত দিয়ে ওসি তারিকুজ্জামান জানান, প্রধান শিক্ষিকা ১৫ দিন আগে স্কুলে যোগদান করেন। গত বুধবার বিকেলে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. আবু সাঈদ স্কুলে যান। তিনি স্কুলের নামে সরকারি অনুদানের ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে তাঁকে দিতে প্রধান শিক্ষিকাকে বলেন। কাজ না করে সরকারি টাকা উত্তোলন এবং সভাপতিকে দিতে অস্বীকার করেন প্রধান শিক্ষিকা।
‘এ সময় উত্তেজিত হয়ে সভাপতি আবু সাঈদ প্রধান শিক্ষিকাকে কিল-ঘুষি ও চর-থাপ্পড় দিতে থাকেন। মারধরের মুখে প্রধান শিক্ষিকা নিজ কার্যালয় থেকে বের হয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। তখন আবু সাঈদের ছেলে বাবু মিয়া (২৫) শিক্ষিকার ওপর চড়াও হন। তিনিও প্রধান শিক্ষিকাকে কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মারা শুরু করেন। মারধরের একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষিকা মাটিতে পড়ে যান। শিক্ষিকার চিৎকারে লোকজন এলে সাঈদ ও তাঁর ছেলে দুজনই স্কুল ত্যাগ করেন,’ যোগ করেন ওসি।
তবে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, ‘আমার সঙ্গে প্রধান শিক্ষিকার ঘটনাটি মিটমাট হয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে ডৌহাখলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল হক বলেন, ‘আবু সাঈদ স্কুলের দাতা সদস্য। প্রধান শিক্ষিকা ১৫ দিন হলো যোগদান করেছেন। আসলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়। তিনি সেটা না মানায় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার আমরা বসেছিলাম, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি মিটমাট করেছি।’
ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জাল হোসেন জানান, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি প্রধান শিক্ষিকাকে মারধর করে ঠিক করেননি।
আজ রোববার দুপুরে এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে এনটিভি অনলাইনকে ওই প্রধান শিক্ষিকা জানান, তিনি সরকারি কর্মকর্তা। তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তিনি শিক্ষা প্রশাসনের কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাঁরা যা ভালো মনে করবেন, তা-ই করা হবে।
প্রধান শিক্ষিকা আরো অভিযোগ করেন, ‘আবু সাঈদ গত বছরের মার্চ মাসে স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগের নাম করে সোনালী ব্যাংক গৌরীপুর শাখায় স্কুল ফান্ডের হিসাব থেকে ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু স্কুলে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, কোনো মিটার স্থাপন বা বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। ভুয়া সংযোগ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
নিজের নিরাপত্তা দাবি করে শিক্ষিকা বলেন, ‘আবু সাঈদের ছেলে বাবু মিয়া আজও দুপুরে স্কুলমাঠে ঘোরাফেরা করেছেন। সহকর্মীসহ আমরা আছেন আতঙ্কে আছি। এ ছাড়া গতকাল শনিবার রাতে স্কুলের পতাকা রাখার স্ট্যান্ড চুরি হয়েছে।’
গৌরীপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ফারজানা জান্নাত জানান, সরকারি কর্মকর্তার গায়ে হাত দিয়ে সভাপতি (আবু সাঈদ) ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিষয়টি মিটমাটের কিছু নেই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।