ফোরকানের সামাজিক মর্যাদা কম হলেও অপরাধ বড়
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিকের সামাজিক মর্যাদা কম হলেও অপরাধ ছোট করে দেখার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার মামলার রায় ঘোষণার সময় রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘আসামির সামাজিক মর্যাদা কম হলেও তাঁর অপরাধের ধরন ছিল বড় অপরাধীদের মতো। তাঁর সেসব অপরাধ খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।’
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফোরকান মল্লিককে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তাঁর বিরুদ্ধে ৯০ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু হয়। পরে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁর ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম।
এদিকে, রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম খান এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘এ মামলা ছিল পারিবারিক জমিজমা-সংক্রান্ত মামলা। আসামির চাচাতো ভাই ২০০৯ সালে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলাটি দায়ের করেন।’
আবদুস সালাম খান আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা আদালতে বলেছেন, ফোরকান মল্লিক রাজনৈতিক কোনো নেতা ছিলেন না। তিনি কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটাননি এবং জোরপূর্বক কাউকে ধর্মান্তরিত করছেন, এ বিষয়েও কোনো প্রমাণ নেই; বরং আসামি ফোরকান মল্লিক ছিলেন দিনমজুর। তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘ফোরকান মল্লিক আর্থিকভাবে এত দুর্বল যে তাঁদের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করারও সামর্থ্যও নেই। তাই কোনো আপিল করা হবে না বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে আমি আইনজীবী হিসেবে তাঁদের পরামর্শ দিয়েছি, আপিল করার জন্য। আপিল করলে তিনি খালাস পাবেন।’
ফোরকান মল্লিকের ফাঁসির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, ‘রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আসামি রাজাকার বাহিনীর সদস্য হয়ে ১৬ বছরের কিশোরী গোলাপী রানীকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। এ ছাড়া আলেয়া বেগম নামের আরেক নারীকে উঠিয়ে নিয়ে তিন দিন পটুয়াখালী সার্কিট হাউসে আটকে রেখে ধর্ষণ করে এবং পরে তাঁকে হত্যা করে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ দুটি অভিযোগে তাঁকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ৪ নম্বর অভিযোগে ফোরকান মল্লিককে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১ ও ২ নম্বর অভিযোগে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।’
ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই ফোরকানের বিরুদ্ধে মির্জাগঞ্জ থানায় আবদুল হামিদ নামের এক ব্যক্তি মামলা করেন। গত বছরের ২৫ জুন তাঁকে বরিশালের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে পটুয়াখালীর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ৩ জুলাই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত করেন প্রসিকিউশনের তদন্ত কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন রায়। ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফোরকানের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে।