মানবতাবিরোধী অপরাধে ফোরকানের মৃত্যুদণ্ড
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটিতে মৃত্যুদণ্ড ও একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বাকি দুটি অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এটি ট্রাইব্যুনালের ২০তম রায়।urgentPhoto
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম।
মোট ৯৯ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত রায় পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনাল। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রায় পড়া শুরু হয়। এর আগে সকালে ফোরকানকে আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়।
ফোরকানের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ১ ও ২ নম্বর প্রমাণিত হয়নি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা
ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই ফোরকানের বিরুদ্ধে মির্জাগঞ্জ থানায় আবদুল হামিদ নামের এক ব্যক্তি মামলা করেন। গত বছরের ২৫ জুন তাঁকে বরিশালের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে পটুয়াখালীর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ৩ জুলাই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত করেন প্রসিকিউশনের তদন্ত কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন রায়। ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফোরকানের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে। দীর্ঘদিন শুনানি শেষে গত ১৪ জুন মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। গত মঙ্গলবার রায়ের জন্য কার্যতালিকায় এনে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়।
ফোরকান মল্লিকের পাঁচ অপরাধ
অভিযোগ নম্বর-১ : ১৯৭১ সালের ২৭ জুন থেকে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও তাঁর সহযোগীরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে গানবোটে করে মির্জাগঞ্জ থানার কাঁকড়াবুনিয়া গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে হাওলাদার বাড়ির মো. কাঞ্চন আলী হাওলাদার, হাজি আবুল কাশেম হাওলাদারসহ মোট সাতজনকে আটক, নির্যাতন এবং বাড়িঘর লুটপাট করে। এ ছাড়া জোরপূর্বক অর্থ আদায় করে এক মাস আটক রেখে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ নম্বর-২ : ১৯৭১ সালের ২ থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে একদিন ফোরকান মল্লিক ও তাঁর রাজাকার সহযোগীরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোট ও স্পিডবোট করে মির্জাগঞ্জ থানাধীন দেউলী গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধ আলতাফ হায়দারসহ মোট ছয়জনের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
অভিযোগ নম্বর-৩ : ১৯৭১ সালের ১২ থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ উদ্দিন খলিফা, মো. আবদুল কাদের জমাদ্দার, দেবেন্দ্রনাথ সরকার ও তাঁর স্ত্রী বিভা রানীকে আটক করে নির্যাতন করে। এ ছাড়া ওই গ্রামে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাটসহ বহু নারীকে ধর্ষণ করা হয়। এ অভিযোগে ফোরকান মল্লিককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ নম্বর-৪ : ১৯৭১ সালের ২২ থেকে ২৫ আগস্ট ফোরকান মল্লিক ও রাজাকারের সহযোগীরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে নিয়ে কাঁকড়াবুনিয়া বাজারে যায় এবং হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধ করে। এ অভিযোগে ফোরকান মল্লিককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ নম্বর-৫ : ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর একদিন ভোরে ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার সদস্যরা মির্জাগঞ্জ থানার কলাগাছিয়া গ্রামে যায় এবং মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হোসেন মৃধার বাড়িতে লুটপাট ও নির্যাতন চালায়। এ অভিযোগে ফোরকানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।