ফোরকান মল্লিকের রায় আজ
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলার রায় আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এটি ২০তম রায়।
গত মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম।
আসামিপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন আবদুস সালাম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মোখলেসুর রহমান বাদল ও ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ফোরকান মল্লিক ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী হয়ে পটুয়াখালীর বিভিন্ন জায়গায় মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন এবং হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি, সর্বোচ্চ সাজা হবে।’
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। আশা করি, তিনি খালাস পাবেন।’
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা
ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই ফোরকানের বিরুদ্ধে মির্জাগঞ্জ থানায় আবদুল হামিদ নামের এক ব্যক্তি মামলা করেন। গত বছরের ২৫ জুন তাঁকে বরিশালের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে পটুয়াখালীর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ৩ জুলাই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত করেন প্রসিকিউশনের তদন্ত কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন রায়। ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফোরকানের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে। দীর্ঘদিন শুনানি শেষে গত ১৪ জুন মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়। গত মঙ্গলবার রায়ের জন্য কার্যতালিকায় এনে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়।
ফোরকান মল্লিকের পাঁচ অপরাধ
অভিযোগ নম্বর- ১ : ১৯৭১ সালে ২৭ জুন থেকে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও তাঁর সহেযাগীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে গানবোটে করে মির্জাগঞ্জ থানার কাকড়াবুনিয়া গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে হাওলাদার বাড়ির মো. কাঞ্চন আলী হাওলাদার, হাজি আবুল কাশেম হাওলাদারসহ মোট সাতজনকে আটক, নির্যাতন এবং বাড়িঘর লুটপাট করে। এ ছাড়া জোরপূর্বক অর্থ আদায় করে এক মাস আটক রেখে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ নম্বর- ২ : ১৯৭১ সালের ২ জুলাইয়ের মধ্যে একদিন ফোরকান মল্লিক ও তাঁর রাজাকার সহযোগীরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোট ও স্পিডবোট করে মির্জাগঞ্জ থানাধীন দেউলী গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধ আলতাফ হায়দারসহ মোট ছয়জনের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
অভিযোগ নম্বর- ৩ : ১৯৭১ সালের আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ উদ্দিন খলিফা, মো. আব্দুল কাদের জমাদ্দার, দেবেন্দ্রনাথ সরকার ও তাঁর স্ত্রী বিভা রাণীকে আটক করে নির্যাতন করে। এ ছাড়া ওই গ্রামে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হয়।
অভিযোগ নম্বর- ৪ : ১৯৭১ সালের ২২ থেকে ২৫ আগস্ট ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার সহযোগীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে নিয়ে কাকড়ায়বুনিয়া বাজারে যায় এবং হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধ করে।
অভিযোগ নম্বর- ৫ : ১৯৭১ সালের ২৯ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর একদিন ভোরে ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার সদস্যরা মির্জাগঞ্জ থানার কলাগাছিয়া গ্রামে যায় এবং মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হোসেন মৃধার বাড়িতে লুটপাট ও নির্যাতন চালায়।