ডাইয়ের বিলে চিংড়ি না ধান, সিদ্ধান্ত নিতে কমিটি
সাতক্ষীরা পৌর এলাকাসংলগ্ন ডাইয়ের বিলে ছয় হাজার বিঘা জমির নোনা পানিতে চিংড়ি চাষ করতে চায় বিল রক্ষা কমিটি। অন্যদিকে এ বিলে চিংড়ি চাষ হলে তিন লাখ জনগোষ্ঠী জলাবদ্ধতার সংকটে পড়বে- এ আশঙ্কায় বিলে ধান চাষের পক্ষে মত দিয়েছে নাগরিক উদ্যোগ নামের আরেকটি সংগঠন। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আজ রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচিত ডাইয়ের বিল সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে এক মত বিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষই নিজেদের মতামত তুলে ধরেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এক মাসের কিছু বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরা পৌরসভাসংলগ্ন ডাইয়ের বিলে চিংড়ি চাষের লক্ষ্যে একটি মহল সুউচ্চ বেড়িবাঁধ দিয়েছে। একই সাথে দখলে চলে গেছে সরকারি খাস খাল। বন্ধ করে দিয়েছে নয়টিরও বেশি কালভার্ট। এতে সাতক্ষীরা পৌরসভা, ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী ও ঝাউডাঙা ইউনিয়নের বহু গ্রামের পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার সাড়ে তিন লাখ জনগোষ্ঠী জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে।
বিলে বাঁধ দিয়ে নোনা পানির চিংড়ি চাষের পক্ষ নিয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সাঈদকে প্রধান করে বিল রক্ষা কমিটি গঠিত হয়েছে। অন্যদিকে চিংড়ি নয় ধান চাষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে জেলা জাসদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজের নেতৃত্বাধীন নাগরিক উদ্যোগ কমিটি। আজ জেলা প্রশাসকের কাছে দুই পক্ষই স্মারকলিপি দিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে।
মতবিনিময় সভায় নাগরিক উদ্যোগের পক্ষে জানানো হয়, নোনা পানির চিংড়ি চাষের ফলে শত শত কৃষক কর্মহীন হয়ে পড়ছে। এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে পরিবেশগত বিপর্যয়। গবাদি পশুচারণ থেমে যাওয়ায় মাংস ও দুধের সংকট দেখা দিয়েছে। ধান ও কাজ না পেয়ে মানুষ হয়ে উঠছে অসহায়। এ ছাড়া ডাইয়ের বিলের পানি সাতক্ষীরা পৌর এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে উল্টো ধাওয়া করবে। এতে মারাত্মক জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে বিল রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধান চাষ অপেক্ষা চিংড়ি চাষে লাভ বেশি। চিংড়িতে লোকসানের সম্ভাবনা কম থাকলেও ধান চাষে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে সরকারি খাস খাল উন্মুক্ত করে দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন তাঁরাও।
এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে ১৫ দিনের সময় নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে গঠন করা কমিটিতে আরো আছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিভাগ ২), মৎস্য বিভাগ, কৃষি বিভাগ, পৌরসভার প্রতিনিধি। সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে এবং জনগণের মতামত নিয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল আহসান বলেন, জনস্বার্থ রক্ষাই বড় বিষয়। মানুষ যাতে জলাবদ্ধতার শিকার না হয়ে মিঠা পানির মাছ ও ধান চাষ করতে পারেন সেই লক্ষ্যই সামনে রয়েছে।
জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আজ মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন নাগরিক উদ্যোগের কাজী রিয়াজ ও বিল রক্ষা কমিটির সভাপতি আবু সাঈদ। এ সময় আরো বক্তব্য দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আবদুল সাদী, পৌরসভার মেয়র এম এ জলিল, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ, নারী নেত্রী শাহনাজ পারভীন মিলি, পৌর কাউন্সিলর ওসমান গনি মিন্টু, ডে-নাইট কলেজের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষে পর্যবেক্ষণমূলক বক্তব্য তুলে ধরেন সুভাষ চৌধুরী, এম কামরুজ্জামান, বরুন ব্যানার্জি প্রমুখ।