খালেদা জিয়ার সময় আবেদন নাকচ
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানির জন্য আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে আদালতে প্রবেশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর তিনি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৩-এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের সামনে রাখা একটি চেয়ারে বসেন। এ সময় তাঁর আইনজীবীরা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানির জন্য সময় আবেদন করেন।
আবেদনে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে নেওয়া সাক্ষ্য বাতিল চেয়ে আবেদনটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানানো হয় এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাক্ষীদের জেরা করতে প্রস্তুতির জন্য সময় আবেদন করা হয়।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিল চেয়ে করা আবেদন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আদালত যদি আবেদন গ্রহণ করে সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিল অবৈধ ঘোষণা করেন, তাহলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাক্ষীদের এই মুহূর্তে জেরা করলে সবই বৃথা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘সারা দেশে নিম্ন আদালতে ২৮ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে, অন্য কোনো মামলা নিয়ে তাড়াহুড়া নেই। রাজনীতির প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে। বিচারক, আপনার ওপর হয়তো চাপ আছে, তাই এই মামলা তাড়াহুড়া করেন। এই মামলায় আমাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ নথিপত্র সরবরাহ করা হয়নি। তাই মামলার প্রস্তুতির জন্য সময় প্রয়োজন। আমরা আশা করি আদালতে ন্যায়বিচার পাব। জনগণের কাছে এই বিচার যেন দৃশ্যমান হয় যে, আদালত সহানুভূতি দেখিয়েছেন।’urgentPhoto
এ সময় আদালত বলেন, ‘প্রস্তুতির জন্য আপনাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছে এবং নথি সরবরাহ করা হয়েছে। আপনারা জেরা শুরু করুন।’ এ সময় আদালত প্রসিকিউশনের বক্তব্য শুনতে চান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, ‘বহু বছর ধরেই খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতে মামলা পরিচালনা করে আসছেন। আমরা তাঁর কাছে ছাত্রের মতো। তিনি মামলার প্রস্তুতি নিতে না পারার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করি তিনি মামলা এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’
এ পর্যায়ে আদালত সময় আবেদন নামঞ্জুর করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার জেরা শুরু করতে বলেন।
এ সময় খন্দকার মাহবুব হোসেন বাদীকে মামলার সময় ও অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
জেরা শেষে খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে বলেন, ‘আগামীকাল থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। সে জন্য খালেদা জিয়া বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকবেন এবং ১৫ রমজানের পর প্রতিবছরের মতো সৌদি আরবে ওমরাহ পালনের জন্য যাবেন। তাঁর মামলার পরবর্তী সময় যেন ঈদের ১০ দিন পরে দেওয়া হয়। এ আবেদনটি আদালত মঞ্জুর করে ২৩ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।’
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি। জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
আদালতে হাজির হয়ে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি ও পূর্বের সাক্ষ্য গ্রহণ বাতিলসহ দুটি আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তাঁর পক্ষে ছিলেন তাঁর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
গত ২৫ মে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিলের জন্য করা আবেদন নাকচ করেন আদালত। একই সঙ্গে মামলা দুটির পরবর্তী শুনানির জন্য ১৮ জুন দিন নির্ধারণ করা হয়।
বিশেষ জজ আদালতে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে নেওয়া ছয় কার্যদিবসে সাক্ষ্য গ্রহণ বাতিলের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, ১ ডিসেম্বর, ৮ ডিসেম্বর, ১৭ ডিসেম্বর এবং এ বছরের ৭ ও ১৫ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ সময় আদালত তা নাকচ করে দেন।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুদক।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তাঁর সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
অন্যদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরো একটি মামলা করে দুদক।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।