খালেদা জিয়ার দুই দুর্নীতি মামলার শুনানি পেছাল
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বাদী হারুনুর রশীদকে আংশিক জেরা করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের কার্যক্রম মুলতবি রাখার জন্য সময়ের আবেদন করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার বাদী হারুনুর রশিদ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। খালেদার আইনজীবীরা ওই সাক্ষ্য বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন বলে সময়ের আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করেছেন তাঁর আইনজীবী।
পরে বিচারক সময়ের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করে বাদীকে জেরা করতে নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে বাদী হারুনুর রশিদকে খালেদার উপদেষ্টা ও আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জেরা করেন।
জেরা করে তিনি বলেন, ট্রাস্ট আইন না মেনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনের সঠিক ব্যবহার করা হয়নি।
পরে ১০ মিনিট জেরা শেষে বিচারক আগামী ২৩ জুলাই বাদীর পরবর্তী জেরার জন্য দিন নির্ধারণ করেন।
দুদকের পক্ষে আদালতে ছিলেন মোশারফ হোসেন কাজল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে খালেদার অনিয়ম নিয়ে জেরা করা হয়েছে। আইনের সঠিক ব্যবহার করা হয়েছে এবং দুদক তফসিলভুক্ত অপরাধ বিধায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আদালতে খালেদার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ প্রমুখ।
খালেদার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যরিটেবল ট্রাস্ট মামলা হতে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’র নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চার জনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
ওই মামলার অপর আসামিরা হলেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
অপরদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান।
এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরবর্তীতে ৫ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন তিনি।
গত ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দ্ইু মামলায় অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুবেদ রায়।