‘পাপিয়াদের’ নিয়ে মনগড়া তথ্য প্রচার হচ্ছে : ডিএমপি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা দু-একটি গণমাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম ভেসে বেড়াচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলের বুক করা কক্ষে তাঁদের যাতায়াত ছিল! কিন্তু ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে এমন ধরনের তথ্য গণমাধ্যমকে দেওয়া হয়নি। অথচ তা প্রচার করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ রকম তথ্য জানানো হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব খবরের ব্যাখ্যা দিয়ে ডিএমপির পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা, শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটিসহ মোট তিনটি মামলায় শামীমা নূর পাপিয়া, তাঁর স্বামী সুমন, সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও তাইবা নূরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বর্ণিত মামলা সম্পর্কে অভিযুক্তদের ডিবি হেফাজতে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাঁদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিচার্য বিষয়গুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সমগ্র বিষয় এখনো তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি। কিন্তু উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি কিছু কিছু গণমাধ্যমে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কোনো রকম আলাপ-আলোচনা না করে তদন্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করা হচ্ছে। তদন্তে প্রাপ্ত কথিত তথ্য হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ও পরিচয় প্রকাশ এবং প্রচার করছে। যার সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা নেই কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য নেই।
ডিএমপি জানিয়েছে, তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে রিমান্ডে থাকা অভিযুক্তদের সম্পর্কে মনগড়া তথ্য প্রচারের ফলে তদন্তকারী কর্মকর্তার ওপর মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক চাপ তৈরি হয়। যার ফলে বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত ব্যাহত ও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বর্ণিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে ঢাকা মহানগর পুলিশ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পেশাদারি ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করছে।
অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, জাল নোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া, তাঁর স্বামী নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ও তাঁদের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
পরে র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, গুলশান থানাধীন পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিনে গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২০ দিন এবং চলতি বছরে ৫ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৫১ দিন ওই হোটেলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটসহ আরো দুটি রুম ভাড়া নিয়ে তাঁরা সবাই অবস্থান করেন। ওই রুমের প্রতিদিনের ভাড়া প্রায় আড়াই লাখ টাকা। ভাড়া বাবদ আসামিরা গত বছর মোট ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৭ টাকা ও চলতি বছর এক কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করেন। এক কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বারের বিলসহ আসামিরা ওই হোটেলের ভাড়া বাবদ মোট দুই কোটি আট লাখ ৯২ হাজার ৮৮৭ টাকা ব্যয় করেন।
পরে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি শামীমা নূর পাপিয়া ও মো. মফিজুর রহমানের দেওয়া তথ্যানুসারে শেরেবাংলা নগর থানাধীন ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের বাসায় ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টা ১০ মিনিটের দিকে অভিযান পরিচালনা করে অস্ত্র, মদ, অর্থ ও ভারতীয় রুপি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় দুটি ও বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করা হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার পৃথক তিনটি মামলায় নরসিংদীর জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ ছাড়া জাল টাকার মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর দুই সহযোগীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
বিমানবন্দর থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গত রোববার পাপিয়ার দুই সহযোগীর ফের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ দিদার হোসাইন।