চাঁদপুর ও বরিশাল লঞ্চঘাটে ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়
করোনা মহামারি কাটিয়ে দুই বছর পর ঈদ উদ্যাপন করতে নাড়ির টানে বাড়ি পৌঁছাতে শুরু করেছে বরিশাল ও চাঁদপুরের মানুষ। আজ শুক্রবার সকাল থেকে এ দুই লঞ্চঘাটে ছিল ঘরে ফেরাদের উপচে পড়া ভিড়। তাঁদের নিরাপত্তায় ঘাটে করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা। অন্যদিকে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা হয়রানি বন্ধে আছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এনটিভি অনলাইনের চাঁদপুর প্রতিনিধি শরীফুল ইসলাম জানান, জেলার লঞ্চ ঘাটে যাত্রীসেবায় নৌপুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, স্কাউটসের সদস্যসহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ঘাট মনিটরিংয়ের দায়িত্বে কাজ করছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নিলেই চালকদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে করা হচ্ছে জরিমানা।
ঈদে লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যাতায়াত পরিদর্শন করেছেন বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এবং নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নুরুজ্জামান। যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধায় লঞ্চঘাটে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
ঢাকা থেকে আসা লঞ্চযাত্রী মো. শামীম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি এসেছি। সব কিছু ভালো ছিল। অন্যবারের মতো ভোগান্তি হয়নি।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল হোসেন চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যাত্রী সেবায় আমরা ঘাটে মনিটরিং করছি। সুস্পষ্টভাবে কোনো অভিযোগ পেলেই জরিমানা করা হচ্ছে।’
চাঁদপুর নৌ পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, সে জন্য নৌপুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লঞ্চঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লঞ্চঘাটজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আমাদের বরিশাল প্রতিনিধি আকতার ফারুক শাহিন জানান, ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের প্রথম দিনে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত একের পর এক যাত্রীবোঝাই লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দরে নোঙর করেছে। যাত্রী নামিয়ে লঞ্চগুলো ফিরে যাচ্ছে ঢাকায়।
বন্দরের বাইরে যানজট নিয়ন্ত্রণে গতকাল রাত থেকে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মীরাও।
বরিশাল নদী বন্দরসূত্রে জানা গেছে, রাত ১টায় ‘রাজারহাট বি’ নামের একটি ভায়া লঞ্চ ঢাকা থেকে বরিশাল নদী বন্দরে প্রথম আসে। এরপর ‘রয়েল ক্রুজ’ নামের আরেকটি লঞ্চ রাত ১টা ২০ মিনিটে নোঙর করে।
এরপর আড়াইটায় ‘পূবালী-৭’, ৩টা ৯ মিনিটে ‘ফারহান-৭’, এরপর পর্যায়ক্রমে ‘মানামী’, ‘রেডসান’, ‘পারাবাত-১০’, ‘প্রিন্স আওলাদ-১০’, ‘কুয়াকাটা-২’, ‘সুন্দরবন-১১’, ‘সুরভী-৮’, ‘কীর্তণখোলা-১০’ ও ‘পারাবাত-১২’ নোঙর করে। এরপর এ রুটের স্পেশাল সার্ভিসের বাকি লঞ্চগুলোও আসে বরিশাল নদী বন্দরে।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভায়াসহ প্রায় ২৩টি লঞ্চ স্পেশাল সার্ভিসের প্রথম দিনে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। মানুষ স্বচ্ছন্দে বাড়ি ফিরছে। এ ছাড়া আমরা প্রতিনিয়ত টহল দিচ্ছি।’
পূবালী ৭ লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশালে আসা যাত্রী আফসানা রুম্পা বলেন, ‘ঈদে শত কষ্ট করে হলেও বাড়ি ফিরে আমি অনেক খুশি। কিছু ভোগান্তি ছিল, তবে নিজ জেলায় পা দিয়ে সব ভুলে গেছি।’
সুন্দরবন ১১ লঞ্চের যাত্রী সুবাহ জাহান বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দুই বছর দেশের বাড়িতে আসতে পারিনি। এবারে আসতে পেরে ভালোই লাগছে। লঞ্চে তেমন কোনো সমস্যাই হয়নি। নির্বিঘ্নে এসেছি।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সেলিম মোহাম্মদ শেখ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা ও তাঁরা যেন করে লঞ্চ ঘাট থেকে নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছাতে পারে, এ জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে মেট্রো পুলিশ।’