কারাগারে নারীর সঙ্গে আসামির সময় কাটানো : সিনিয়র জেল সুপার ও জেলার প্রত্যাহার
করোনাকালে আসামির সঙ্গে এক নারীর সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তদন্তের স্বার্থে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এর সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় ও জেলার নূর মোহাম্মদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ রোববার কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে তাঁদের প্রত্যাহার করে কারা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।’
করোনা মহামারির মধ্যে কারাগারের বন্দিদের সঙ্গে দর্শনার্থীর সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ। তা উপেক্ষা করে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সম্প্রতি দেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির প্রতিষ্ঠান হল-মার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমদ কারাগারের ভেতরে এক নারীর সঙ্গে সাক্ষাতের সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়। সেটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও কারা কর্তৃপক্ষ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
গত শুক্রবার অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেছিলেন, ‘কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ সাকলাইন, সার্জেন্ট আব্দুল বারী ও সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমানকে প্রত্যাহার করে কারা সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।’
মো. মোমিনুর আরো বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট যেকোনো কর্মকর্তাকেও অতি দ্রুতই প্রত্যাহার করা হতে পারে।’
প্রথমে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ফুটেজটি প্রকাশিত হলে তা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফুটেজটিতে দেখা যায়, গত ৬ জানুয়ারি কারাগারে কর্মকর্তাদের কার্যালয় এলাকায় কালো রঙের পোশাক পরে ঘোরাফেরা করছেন হল-মার্কের জিএম তুষার। এর কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে বেগুনি রঙের সালোয়ার-কামিজ পরিহিত এক নারী সেখানে ঢোকেন।
সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় ও ডেপুটি জেলার সাকলাইনের কারাগারে অবস্থানকালেই ওই ঘটনা ঘটে।
দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে দুই যুবকের সঙ্গে ওই নারী কারাগারের কর্মকর্তাদের কক্ষের দিকে যান। তাকে সেখানে রিসিভ করেন ডেপুটি জেলার সাকলায়েন। ওই নারী কক্ষে প্রবেশ করার পর সেখান থেকে বেরিয়ে যান ডেপুটি জেলার সাকলায়েন। এর প্রায় ১০ মিনিট পর কারাগারে বন্দি তুষার আহমদকে নিয়ে যাওয়া হয়।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) আবুল কালাম বলেন, ‘ওই ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
এডিএম আবুল কালামকে প্রধান করে গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা ফারজানা ও মো. ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনাটির তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
এদিকে কারা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক মো. আবরার হোসেনকে। ২১ জানুয়ারি তাঁকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন কারা অধিদপ্তরের উপসচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) মো. আবু সাঈদ মোল্লাহ ও ডিআইজি (ময়মনসিংহ বিভাগ) মো. জাহাঙ্গীর কবির।
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক মো. আবরার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনার তদন্তকালে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে বিষয়টি জানানো হবে।’