রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের নজিরবিহীন ড্রোন হামলা, উত্তেজনা তুঙ্গে

রাশিয়ার পাঁচটি ভিন্ন অঞ্চলের সামরিক বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার খবর নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার (২ জুন) ইস্তাম্বুলে শুরু হতে যাওয়া শান্তি আলোচনার প্রাক্কালে এই বিস্ময়কর হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। খবর আল জাজিরার।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, মুরমানস্ক, ইরকুৎস্ক, ইভানোভো, রিয়াজান এবং আমুর অঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে মুরমানস্ক ও ইরকুৎস্কে ড্রোন হামলায় একাধিক সামরিক বিমান আগুনে পুড়ে গেছে। এসব ড্রোন হামলা মূলত বিমানঘাঁটির কাছাকাছি অঞ্চল থেকে চালানো হয় বলে জানানো হয়েছে।
তবে অগ্নিকাণ্ড দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে রাশিয়া। অভিযানে জড়িত কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার (১ জুন) রাতে এই ড্রোন অভিযানের প্রশংসা করে বলেন, “এটি একেবারেই অসাধারণ ও স্বতন্ত্র এক সাফল্য। ইউক্রেনের নিজস্ব পরিকল্পনায় এই হামলা সম্পন্ন হয়েছে।” তিনি জানান, এ অভিযানের প্রস্তুতি চলেছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এবং এটি ইউক্রেনের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দূরবর্তী অভিযান।
জেলেনস্কি আরও জানান, অভিযানে মোট ১১৭টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে এবং এতে রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা (এসবিইউ) জানিয়েছে, হামলায় প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের রুশ সামরিক বিমান ধ্বংস হয়েছে। এসব বিমান ঘাঁটি ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। লক্ষ্যস্থলগুলোর মধ্যে ছিল ইরকুৎস্কের বেলায়া বিমানঘাঁটি (যা ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৪,৩০০ কি.মি. দূরে) এবং মুরমানস্কের ওলেনিয়া ঘাঁটি (১,৮০০ কি.মি. দূরে)।
এসবিইউ-এর একটি সূত্র ইউক্রেনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম ইউক্রইনফর্মকে জানায়, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা, যারা ইউক্রেনে হামলায় নিয়োজিত।
আল জাজিরার মস্কো প্রতিনিধি দোরসা জাব্বারি বলেন, “এই হামলাগুলো ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত এবং এতে রাশিয়ার অভ্যন্তরে থাকা একাধিক সহযোগীও যুক্ত ছিল।” তিনি এটিকে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে একদিনে রাশিয়ার অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে উল্লেখ করেন।
কিয়েভ থেকে আল জাজিরার জন হেনড্রেন বলেন, “এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রতিশোধ।”
এদিকে, রোববার রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক অঞ্চলে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন ব্রিজ পার হওয়ার সময় বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৭ জন নিহত ও ৬৯ জন আহত হয়। ট্রেনটিতে ৩৮৮ জন যাত্রী ছিল। যদিও এখনও কেউ এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি, রাশিয়া একে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এছাড়াও, রাশিয়া দাবি করেছে তারা ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে আরও অগ্রসর হয়েছে। ওপেন-সোর্স মানচিত্র অনুসারে, মে মাসে রাশিয়া ইউক্রেনের ৪৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে—গত ছয় মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রোববার রাতে রাশিয়া ইউক্রেনে ৪৭২টি ড্রোন ও ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা যুদ্ধ শুরুর পর সর্বোচ্চ।
এই উত্তেজনার মধ্যেই সোমবার ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। তুরস্ক আলোচনার আয়োজক, আর এই বৈঠকের পেছনে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, আলোচনায় ইউক্রেনের অবস্থান হবে “পূর্ণ ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি ও অপহৃত শিশুদের প্রত্যাবর্তন।” তবে রাশিয়া এখনও তাদের প্রস্তাবনা প্রকাশ করেনি। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তুরস্কের প্রস্তাবিত শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকেও অসম্মতি জানিয়েছেন।