নাইজেরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় নিহত ১৫১, বাস্তুচ্যুত হাজারো মানুষ

নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ১৫১ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এখনও নিখোঁজদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে শনিবার (৩১ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
নাইজার প্রদেশের গ্রামীণ শহর মোকওয়াতে গত বুধবার (২৮ মে) রাত থেকে টানা ভারী বৃষ্টির ফলে আকস্মিক এই বন্যার সূত্রপাত হয়।
নাইজার স্টেট ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (এনএসইএমএ)-এর মুখপাত্র ইব্রাহিম আওদু হুসেইনি শনিবার জানান, মোকওয়া শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে আরও মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫১ তে দাঁড়িয়েছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক আহমেদ ইদরিস বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ১৫১ বলা হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা দুই, তিন বা চারগুণও বেশি হতে পারে।
এখন পর্যন্ত অন্তত তিন হাজার ১৮ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ২৬৫টি ঘর সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানান এনএসইএমএ মুখপাত্র। অনেক মৃতদেহ নাইজার নদীর স্রোতে ভেসে গেছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি বোলা টিনুবু ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি শোক প্রকাশ করে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি জানান, “ত্রাণ সামগ্রী ও অস্থায়ী আশ্রয় সহায়তা দ্রুত সরবরাহ করা হচ্ছে।”

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ টাঙ্কো আল জাজিরাকে বলেন, “আমরা পরিবারসহ সবকিছু হারিয়েছি। থাকার মতো আর কোনো জায়গা নেই, সম্পত্তিও নেই। শুধু এই বাড়ি থেকেই আমরা অন্তত ১৫ জনকে হারিয়েছি।”
আরেকজন বেঁচে যাওয়া বলেন, “আমি শুধু রাতের পোশাক পরে পালিয়ে এসেছি। এখন আমি চিনতেও পারছি না, আমাদের বাড়িটা কোথায় ছিল।”
স্থানীয়রা ধারণা করছেন, উজানে কোনো বড় ধরণের সমস্যা, হয়তো কোনো বাঁধ ভেঙে পড়েছে, যার কারণে হঠাৎ এত পানি নেমে এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছু নিশ্চিত করেনি।
আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, আগামী কয়েকদিনে আরও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে, ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। নাইজেরিয়ায় ছয় মাসব্যাপী বর্ষাকালে বন্যা একটি নিয়মিত ঘটনা হলেও, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং দুর্বল নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে এসব দুর্যোগ এখন আরও ঘন ঘন এবং ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

নাইজেরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যা ঝুঁকি বিশ্লেষক উগোনা নকুনোনও জানান, “এই বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনেরই ফলাফল। এক বছরে যত বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা, তা এখন এক বা দুই মাসেই হয়ে যাচ্ছে — মানুষ এত বৃষ্টির জন্য প্রস্তুত নয়।”
২০২৩ সালেও একই ধরনের বন্যায় নাইজেরিয়ায় এক হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (এনইএমএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই মর্মান্তিক ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় — নদীপথ ও নিষ্কাশন চ্যানেল বন্ধ করে ঘরবাড়ি তৈরি কতটা বিপজ্জনক।”