পুতিনকে ‘পাগল’ বলায় ট্রাম্পের ওপর ক্ষুব্ধ ক্রেমলিন

রাশিয়ার সর্ববৃহৎ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘পুরোপুরি পাগল’ বলে মন্তব্য করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে “চরম আবেগে ভুগছেন” বলে মন্তব্য করেছে ক্রেমলিন। খবর বিবিসির।
রোববার (২৫ মে) ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “পুতিনের কিছু একটা হয়েছে... তিনি এখন পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছেন। তিনি অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক মানুষকে হত্যা করছেন।”
এর প্রতিক্রিয়ায় রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “এ ধরনের মন্তব্য সংশ্লিষ্ট সবার আবেগগত চাপে পড়ার ফল।”
রাশিয়া শনিবার (২৪ মে) রাতে ইউক্রেনে ৩৬৭টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যাতে অন্তত ১৩ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হন। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত আরও ৩৫৫টি ড্রোন হামলা চালানো হয়, এতে আরও ১০ জন নিহত হয়।
পেসকভ বলেন, এসব হামলা ছিল ইউক্রেনের “সামাজিক অবকাঠামোতে হামলার জবাব”।
এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ বলেন, ইউক্রেনকে সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহারে আর কোনো দূরত্ব-সীমা নেই। ফলে ইউক্রেন এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরে সামরিক অবস্থানে পাল্টা হামলা চালাতে পারবে।
বিবিসি জানিয়েছে, জার্মানি ইউক্রেনকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টরাস ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার—যা এর আগে ইউক্রেনকে দেওয়া অস্ত্রের তুলনায় অনেক বেশি।
রাশিয়া এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহকে “বিপজ্জনক পদক্ষেপ” বলে আখ্যা দিয়েছে।
নিউ জার্সিতে এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “আমি পুতিনকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি, সবসময় তার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল। কিন্তু এখন তিনি যেভাবে শহরে শহরে রকেট ছুড়ে মানুষ মারছেন, তা আমি একেবারেই পছন্দ করছি না।”
তিনি জানান, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও তিনি ভাবছেন। একই সঙ্গে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও কড়া সমালোচনা করে বলেন, “জেলেনস্কি যা বলছেন, তা তার দেশের উপকারে আসছে না বরং সমস্যাই বাড়াচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।”
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে দুই ঘণ্টার ফোনালাপ হয়, যেখানে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। ট্রাম্প দাবি করেন, “আলোচনাটি খুব ভালো হয়েছে” এবং খুব শিগগিরই ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসবে।
তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ৩০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হলেও পুতিন এখনও তা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেননি। তিনি কেবল বলেছেন, রাশিয়া একটি “সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি সংক্রান্ত স্মারকলিপি” নিয়ে কাজ করতে পারে। ইউরোপীয় মিত্ররা একে সময়ক্ষেপণের কৌশল হিসেবে দেখছে।

১৬ মে ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন-রাশিয়া সরাসরি আলোচনা হয়, যা ২০২২ সালের পর প্রথম। তবে যুদ্ধ বন্ধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ।