সংঘর্ষ-প্রাণহানিতে পশ্চিমবঙ্গে চলছে পঞ্চায়েত ভোট

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট শুরু হয় আজ শনিবার (৮ জুলাই)। দিনের শুরুতেই বোমা নিক্ষেপ, গুলিবর্ষণ, বুথ দখল, ভাঙচুর ও সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটেছে।
পঞ্চায়েত ভোট শুরু হতেই বোমা বৃষ্টি, গুলি চলল, বুথ দখল হলো, ব্যালট বাক্স বাইরে ফেলে দেওয়া হলো, ব্যালট বাক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলো। এর সঙ্গে আরম্ভ হয়ে গেল লাশ গোনা। এছাড়া ভোটদাতারা বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেছে, কিন্তু ভিতরে জাল ভোট দেওয়ায় ভোটপর্ব শেষ। কোথাও প্রিসাইডিং অফিসার বললেন, ব্যালট ছিনতাই হয়েছে, কোথাও বললেন, কারা ভোট দিয়ে চলে গেছে জানি না। ভোট দেওয়ার দাবি তুলে ভোটদাতারা বুথ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কোচবিহারে খাটামারিতে বুথ দখল করে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। মারধর করা হয় প্রিসাইডিং অফিসারকে। আরেক জায়গায় ব্যালটে পানি ঢেলে দেওয়া হয়।
শুক্রবার (৭ জুলাই) রাত থেকে শুরু হয়ে যায় হামলা ও মৃত্যু। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মুর্শিদাবাদে। শুক্রবার রাত ও শনিবার সকাল মিলিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সবাই তৃণমূল কর্মী। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শুরু হতেই যে রানিনগরে গোলমাল ও সহিংসতা শুরু হয়েছিল, সেখানে ভোটের দিন সকালেও ব্যাপক তাণ্ডব হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে ব্যাপক বোমাবাজি হয়েছে। মোহনপুরে পিস্তল হাতে দাপাদাপির ঘটনায় অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে।
কোচবাহিরে খুন হয়েছেন বিজেপির পোলিং এজেন্ট। দিনহাটায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থী। সমসেরগঞ্জে ও ইসলামপুরে বোমায় দুজন আহত হয়েছেন, নিমতিতায় ব্যালট লুট হয়েছে, দিনহাটায় বুথ তছনছ করা হয়েছে, রামপুরহাটে বুথে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, বীরভূমে ব্যাপক জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় বোমাবাজির পর রাস্তায় রক্ত পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ডায়মন্ড হারবারের ন্যাতড়ায় বুথে ঢুকে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। মালদহে খুন হয়েছেন তৃণমূলকর্মী। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে সিপিএম কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোটপর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হলো। এত সংঘর্ষ, গুলি, বোমার মধ্যে টিভির পর্দায় দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ অধিকাংশ জায়গায় মূলত দর্শক হয়েই থেকেছে।
ভাঙরের অবস্থা
মনোনয়নপর্বে ভয়ঙ্কর সহিংসতা দেখেছিল ভাঙর। কলকাতা থেকে মাত্র এক ঘণ্টা দূরের এই জায়গায় শনিবার সকাল থেকেই সহিংসতা হয়েছে।
চকমরিচা গ্রামে বুথে যাওয়ার রাস্তায় শুধু বোমার চিহ্ন। রাস্তার দুপাশে ছড়িয়ে আছে বোমার টুকরো। কিছুটা দূরে রাস্তায় চাপ চাপ রক্ত। অভিযোগ, আইএসএফ কর্মীদের লক্ষ্য করে বোমা মারা হয়েছিল। দুজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ভাঙরে একটি বুথের বাইরে দেখা গেল, আইএসএফের বুথ কর্মী মশিদুল মোল্লা ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। তার অভিযোগ, তৃণমূলের দুষ্কৃতকারীরা তাকে মেরেছে। তিনি বুথ থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
ভাঙরের হাতিশালায় তো আইএসএফের নারী প্রার্থী হাজিরা বিবির বাড়িতে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। টিভিতে সেই ছবি দেখার পর পুলিশ বেলা ১০টা নাগাদ সেখানে যায়। কিন্তু, আইএসএফ প্রার্থী জানিয়ে দেন, পুলিশের ওপর তার ভরসা নেই। তিনি এখন বাড়ির বাইরে যাবেন না।