ফ্রান্সে টানা পঞ্চম রাতে ব্যাপক বিক্ষোভ-সংঘর্ষ
ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে এক কিশোর নিহত হওয়ার পরে চলমান অস্থিরতা পঞ্চম রাতে গড়িয়েছে শনিবার (১ জুলাই)। এদিন মার্সেই শহরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। খবর বিবিসির।
ঘটনার ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করছে। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় ওই শহরে অন্তত ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে প্যারিসে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে বিক্ষোভ অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে এক টুইট বার্তায় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ‘সংকল্পবদ্ধ পদক্ষেপের’ প্রশংসা করে বলেন, এর ফলে একটি ‘শান্ত রাত’ এসেছে।
এদিকে, পুলিশের গুলিতে নিহত ১৭ বছর বয়সী নাহেল এম নামের ওই আফ্রিকান কিশোরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিশাল জনসমাগম হয়েছে। প্যারিসের শহরতলি নান্টেরেতে এ হত্যাকাণ্ডের পর মঙ্গলবার (২৭ জুন) থেকে অনেক ফরাসি শহরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
শনিবার (১ জুলাই) রাতে সারা দেশে প্রায় ৪৫ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৪৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে এক হাজার ৩০০ জনের বেশি এবং বৃহস্পতিবার ৯০০ জনের বেশি গ্রেপ্তার করা হয়।
মার্সেই শহরে শনিবার সন্ধ্যাব্যাপী পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। অনলাইনে প্রচারিত বিভিন্ন ফুটেজে পুলিশকে বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, মার্সেইয়ের কেন্দ্রস্থল লা ক্যানেবিয়ের এভিনিউতে সংঘর্ষ চলছে। ফরাসি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই এলাকায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের একটি বড় দলের মধ্যে লড়াই হয়েছে।
প্যারিসের আইকনিক চ্যাম্পস-এলিসিস এভিনিউতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের সেখানে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল, কিন্তু পুলিশের উপস্থিতির কারণে তাদেরকে দূরে থাকতে হয়েছে।
প্যারিসের পুলিশ জানায়, তারা ১৯৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজধানীতে রাত ৯টার পর থেকে দ্বিতীয় রাতের মতো সব বাস ও ট্রাম চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রচেষ্টা পর্যবেক্ষণ করতে প্যারিসে জাতীয় পুলিশের কমান্ড কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় লিলে শহরে পুলিশের বিশেষ বাহিনীকে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে। শহরের রাতের ছবিতে বিক্ষোভকারীদের জ্বালিয়ে দেওয়া গাড়ির আগুন নেভাতে দেখা যায় দমকলকর্মীদের।
কর্মকর্তারা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, লিয়ন শহরে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিস ও স্ট্রাসবার্গেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার ১৭ বছর বয়সী নাহেলের জানাজা প্যারিসের শহরতলি নান্টেরের এক মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে তার মরদেহ স্থানীয় কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
ট্রাফিক চেকপোস্টে থামতে অস্বীকার করার পরে নাহেলকে গুলি করা হয়েছিল এবং জরুরি পরিষেবার সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরে সে মারা যায়। নাহেলের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই পুলিশ কর্মকর্তা গাড়ি থামানোর চেষ্টা করছে এবং এক কর্মকর্তা চালকের দিকে অস্ত্র তাক করতে দেখা গেছে।
ইতোমধ্যে গুলি চালানো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। নাহেলের এমন মৃত্যুতে ফ্রান্সের বিতর্কিত আগ্নেয়াস্ত্র আইন-২০১৭ ও পুলিশের আচরণ নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ককে পুনরুজ্জীবিত করেছে। আইনটিতে গাড়িচালক থামার নির্দেশ উপেক্ষা করলে পুলিশকে গুলি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া দেশটির পুলিশ বাহিনীর বর্ণবাদ আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বলেছে, এই অস্থিরতায় ফ্রান্সের জন্য ‘আইন প্রয়োগে বর্ণবাদের গভীর সমস্যাগুলো সমাধান করার’ একটি সুযোগ সামনে এসেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নাহেলের মৃত্যুকে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন। ম্যাক্রোঁ শুক্রবার সহিংসতার নিন্দা করে বলেন, নাহেলের মৃত্যু সহিংসতাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, তিনি ‘কিশোরের মৃত্যুকে অগ্রহণযোগ্য শোষণ’ বলে অভিহিত করেছেন।