শর্ষেবীজ বপন করে সিঙ্গুরে কৃষির সূচনা করলেন মমতা
কথা দিয়ে কথা রাখলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ থেকে ১০ বছর আগে যে জমিতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, জোর করে এখানে শিল্প গড়তে দেবেন না- বৃহস্পতিবার সেই জমিতে নিজে হাতে শর্ষেবীজ বপন করে সেই কথা রাখলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুরে পৌঁছান মমতা। সেখানে গিয়ে নিজের হাতে সিঙ্গুরের জমিতে শর্ষেবীজ বপন করে কৃষি কাজের সূচনা করেন তিনি।
বীজ বপন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় মমতা বলেন, ‘সিঙ্গুর আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে যে লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে কখনো পালিয়ে যেতে নেই।’ মমতা জানান, তাঁর সরকার নির্দিষ্ট নীতি মেনেই চলবে। গায়ের জোরে কারো জমি কেড়ে নেওয়া হবে না। তবে পশ্চিমবঙ্গে শিল্প গড়তেও পিছুপা হবে না তাঁর সরকার। সবদিক বজায় রেখেই তাঁর সরকার উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের জমিতে পৌঁছে টাটাদের কাছ থেকে নেওয়া জমি ঠিকঠাক কৃষকদের চাষযোগ্য হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখেন। মমতা বলেন, ‘সিঙ্গুরের মোট ৯৩১ একর জমি কৃষকদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো অবস্থায় নিয়ে আসতে পেরেছে সরকার। তবে ৩৫ একর জমির ওপর এখনো টাটার স্থাপনা রয়েছে। তাই সেগুলো ফেরাতে একটু সময় লাগবে। সিঙ্গুরের জমিতে ৬৫ একর জমিকে চাষযোগ্য করার কাজ এখরো চলছে। এখানকার মোট দুই হাজার ২১৬ জন কৃষককে ওই জমি আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে বাম শসনামলে সিঙ্গুরের জমি ন্যানো কারখানা গড়ার জন্য টাটা লিমিটেডকে দেওয়া হয়। সিঙ্গুরের চাষিদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে ওই জমি টাটা কোম্পানির হাতে বাম সরকার তুলে দিয়েছে অভিযোগে আন্দোলনে নামেন তখনকার পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর টানা আন্দোলন। সিঙ্গুর ইস্যুতে তোলপাড় হয় গোটা রাজ্য ও দেশ। একসময় এই সিঙ্গুর আন্দোলনে রীতিমতো নাকানি চোবানি খেয়ে ক্ষমতা খোয়াতে হয় বামদের।
এরপর পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে দিন গুনছিল সিঙ্গুরবাসী। কবে তারা ফিরে পাবে তাদের জমি তা নিয়ে উৎকণ্ঠাও ছিল। অবশেষে সিঙ্গুর মামলায় সিঙ্গুরবাসীর আশা পূর্ণ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। চলতি বছরের গত ৩১ আগস্ট ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সিঙ্গুরের জমি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরই কাল বিলম্ব না করে সিঙ্গুরের জমি চাষযোগ্য করে চাষিদের কাছে ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।