পানামা পেপারস ফাঁস : যে সাতটি বিষয় জানতে হবে

ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) এক কোটি ১৫ লাখ নথি ফাঁস করেছে, যেগুলো ‘পানামা পেপারস’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। সিএনএনের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত সাতটি জানার বিষয় তুলে ধরা হলো।
পানামা পেপারস কী?
আইসিআইজে ও একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের জোট এসব নথি অনুসন্ধান করেছে, যার মাধ্যমে একটি গোপন নেটওয়ার্কের খোঁজ পাওয়া গেছে। এ নেটওয়ার্কে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পরিবার, ফিফার এথিকস কমিটির সদস্যরা রয়েছেন।
পানামা পেপারস কেন বলা হচ্ছে?
এক কোটি ১৫ লাখ নথিতে চার দশকের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এসব নথি ছিল মধ্য আমেরিকার দেশ পানামাভিত্তিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার কাছে। আইসিআইজে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনেতা, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামে গোপন কোম্পানি গঠনের ব্যাপারে সহায়তা করেছে। আইসিআইজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে পরিচালিত নিরীক্ষায় (অডিট) দেখা গেছে, মোসাক ফনসেকা ১৪ হাজার ৮৬ কোম্পানির মধ্যে ২০৪টির প্রকৃত মালিকের পরিচয় জানত।
স্পষ্টভাবে বেআইনি কিছু কি হয়েছে?
নথিতে অবৈধ কোনো কিছুর ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। তবে গোপন কোম্পানি ও বিদেশি অ্যাকাউন্ট খোলা আর্থিক লেনদেন ও আসল মালিকদের পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবহার হতে পারে। আইসিআইজের মতে, এসব ফাইলে যেসব মানুষ ও কোম্পানির নাম এসেছে, তারা সবাই মাদকপাচার ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত।
এসব নথিতে কাদের নাম এসেছে?
নথিতে ১২ জন বর্তমান ও সাবেক বিশ্বনেতা, ১২৮ রাজনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তার নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম না থাকলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির নাম রয়েছে। ফিফার কর্মকর্তা, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুনডুর ডেভিড গানলগসন, তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোম্পানির মালিকানা বিষয়ে গোপন করার অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মৌরিসিও মাক্রি একটি কোম্পানির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য গোপন করেছেন।
অভিযুক্তরা কী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে?
পুতিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া। কর্তৃপক্ষ এটাকে ‘মিথ্যার পরম্পরা’ বলে অভিহিত করেছে। ফুটবলের শীর্ষ সংস্থা ফিফার গভর্নিং বডি এটাকে ‘হাস্যকর’ বলেছে। আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, তিনি কোনো কর সুবিধা নেননি এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মাক্রির মুখপাত্র বলেছেন, প্রেসিডেন্টের নামে কখনো কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। তবে ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও মেক্সিকো সম্ভাব্য কর ফাঁকির তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে।
মোসাক ফনসেকা কী বলছে?
সোমবার এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আমার ব্যবসা জনসাধারণ ভালো বোঝে না এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ধারাবাহিক নথি প্রকাশের ফলে এ নিয়ে বিভ্রান্তি আরো বাড়বে। সত্য হলো, আমরা তথ্য ফাঁসের শিকার হয়েছি, অবৈধভাবে যেসব গুচ্ছ গুচ্ছ নথি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আমরা বেআইনি কিছু করেছি বলে উল্লেখ নেই। এবং পানামায় ব্যবসা করে আমরা গত ৪০ বছরে যে সুনাম অর্জন করেছি, তা অক্ষুণ্ণ থাকবে।’
প্রতিষ্ঠানটির কো-ফাউন্ডার র্যামন ফনসেকা মোরা সিএনএনকে বলেন, ‘কেউই চান তাঁর সম্পত্তি হাতছাড়া হোক এবং দোষীদের বিচারে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
আইসিআইজে কীভাবে সব নথি পেল?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র নথিগুলো প্রথম জার্মানির পত্রিকা সিদৎস জাইতুংকে সরবরাহ করে এবং পত্রিকা পরে আইসিআইজের কাছে দেয়। অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো, যেমন—বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, ম্যাকক্ল্যাচি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।