বাংলাদেশ নিয়ে বিজেপির গোপন সভা!
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাম লাল বাংলাদেশের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে একটি ‘গোপন সভা’ করেছেন। গত সপ্তাহে কলকাতার কাছে একটি অবকাশযাপন কেন্দ্রে (রিসোর্ট) এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে সম্প্রতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ঘটে যাওয়া হামলার প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য ওই সভার আয়োজন করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা, সুশীল সমাজের সদস্য, সাংবাদিকসহ মতামত তৈরিতে ভূমিকা রাখেন এমন প্রায় ১০ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাও বৈঠকে ছিলেন। রাম লালের সভাপতিত্বে পরপর দুদিন এ বৈঠক চলে।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ এ খবর জানিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকার সূত্রের বরাত দিয়ে প্রভাবশালী পত্রিকাটি জানিয়েছে, কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দত্তত্রেয়া হোসাবেল ওই বৈঠকে ভূমিকা রাখেন। নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে সংঘের পরিকল্পনারই অংশ এ বৈঠক।
আরএসএস সূত্র জানায়, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক নেতা রাম মাধবকেই বৈঠকে পাঠাতে চেয়েছিলেন হোসাবেল। কিন্তু তিনি আসামের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকায় বৈঠকে থাকেননি।
বৈঠকে যোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, ‘বৈঠকে আমরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছি। এ ছাড়া বিজেপি ও আমাদের দলের মধ্যে কীভাবে আরো শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের ওই নেতা টেলিগ্রাফকে আরো বলেন, ‘দলীয় নেতাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি পেয়েই আমি ভারতে এসেছি।’ পাশাপাশি বিজেপি বা আরএসএসের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের কোনো ধরনের সমস্যা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
টেলিগ্রাফের মতে, ভারতে বিজেপির উত্থানের সঙ্গে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রধান শত্রু বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর উত্থান যুগপৎ ঘটনা। গত কয়েক বছরে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় সে সমস্যা এখন অনেকটাই কমে গেছে।
যদিও ভারতের কংগ্রেসের সঙ্গে বরাবরই সম্পর্ক রেখে চলা শেখ হাসিনার সরকার নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের বিষয়ে সতর্ক ছিল। তবে শুরুর দিকের সেই ভাবনা এখন আর নেই। এখন উভয় পক্ষের কূটনীতিকরাই মনে করেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘কখনোই এত ভালো ছিল না’।
দিল্লির একটি সূত্র টেলিগ্রাফকে বলেছে, ‘মনে হচ্ছে, ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে অনেক কিছুই ঘটে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিন্তু এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।’
অবসরপ্রাপ্ত এক কূটনীতিক টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘আমরা জানি না, বৈঠকে আসলে কী হয়েছে। তাই আমরা এ বিষয়ে কোনো কিছু অনুমানও করতে পারি না...। তবে আমি শুধু আশা করি, বৈঠকটিকে প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে না।’