পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভাগের দাবি প্রকট হচ্ছে
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভাগের দাবি ক্রমে প্রকট হচ্ছে। কোচবিহারকে পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়ে আন্দোলন যত দিন যাচ্ছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে। এই ইস্যুতে ‘দ্য গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সঙ্গে আন্দোলনে শামিল হচ্ছে ‘কামতাপুরি পিপসল পার্টি’ (কেপিপি)। ফলে আন্দোলন আরো জোর পাচ্ছে। কেপিপিও কামতাপুরি রাজ্যের দাবি তুলতে শুরু করেছে। ফলে পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হচ্ছে।
কেপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিখিল রায় বলেছেন, ‘পৃথক কামতাপুরি রাজ্যের দাবিতে ১৯৬৯ সাল থেকে আন্দোলন চলছে। কিন্তু আমাদের দাবি নিয়ে রাজ্য কিংবা কেন্দ্র কেউই কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। এবারে আমরা উত্তরবঙ্গজুড়ে আন্দোলন চালাব।’
আন্দোলনকারীরা জানান, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে ১৯৬৯ সাল থেকে কামতাপুরি রাজ্য এবং পৃথক কামতাপুরি ভাষার স্বীকৃতিসহ একাধিক দাবিতে কেপিপি আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের জেরে এরই মধ্যে কেপিপির বহু নেতাকর্মীও গ্রেপ্তার হন।
তবে ২০০৪ সালে কেপিপি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। নিখিল রায় মূল কেপিপিতে থাকলেও অতুল রায় ‘কামতাপুরি প্রগ্রেসিভ পার্টি’ নামে আলাদা দল গঠন করেন। যদিও দুই পক্ষেরই দাবি অভিন্ন, পৃথক কামতাপুরি রাজ্য। কামতাপুরি ও কোচ-রাজবংশীদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি নিয়ে পৃথক কামতাপুরি রাজ্য গঠনের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
অন্যদিকে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও ‘গ্রেটার কোচবিহার’ রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন চলছে। ফলে এবার গ্রেটার কোচবিহার ইস্যু নিয়ে যখন আন্দোলনের পারদ চড়ছে, ঠিক সে সময়েই ফের কামতাপুরি রাজ্য গঠনের দাবি নিয়ে সেই আন্দোলনের শক্তিকে আরো বৃদ্ধি করার পথে হাঁটল কেপিপি।
কামতাপুরি প্রগ্রেসিভ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অতুল রায় বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সাত জেলাকে নিয়ে পৃথক কামতাপুরি রাজ্য গঠনের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। এবারে আমরা উত্তরবঙ্গজুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটব।’
একদিকে গ্রেটার কোচবিহার, অন্যদিকে কামতাপুরি রাজ্যের দাবিতে কোচবিহারে লাগাতার চলছে রেল অবরোধ। কয়েক দিন ধরে রেল অবরোধের জেরে কার্যত উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রেল যোগাযোগব্যবস্থা। এরই মধ্যে কোচবিহারে রেল অবরোধের জেরে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। অসুস্থ হয়ে পড়েছে একাধিক শিশু। তথাপি রেল অবরোধ তুলতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। ৫০ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। নিজেদের দাবিতে অনড় গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন।
গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বংশীবদন বর্মন বলেন, ‘আমাদের দাবি থেকে সরে আসার কোনো প্রশ্নই নেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ আমাদের সঙ্গে কথা না বললে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
এদিকে, এই আন্দোলনের জেরে উত্তরবঙ্গের একাধিক ট্রেনকে বাতিল করতে হয়েছে। দূরপাল্লার ট্রেনগুলোকে ঘুরপথে চালাতে হচ্ছে।
উত্তর রেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নীরজ শর্মা জানান, উত্তরবঙ্গের সব ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের বহু ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে।
চার দিন ধরে একের পর এক ট্রেন বাতিল হওয়ায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারতীয় রেল। এরই মধ্যে কোচবিহারের আন্দোলনকারীদের কাছে রেল পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার আবেদন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। তবুও আন্দোলন প্রশমিত হওয়ার নামগন্ধটি পর্যন্ত নেই। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার শুরু হয়েছে রেল অবরোধ।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব জানিয়েছেন, রেললাইনের ওপর যেহেতু অবরোধ চলছে, তাই রেল পুলিশকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে রেল পুলিশ ব্যবস্থা নিলে তাঁরা সঙ্গে থাকবেন।
কিন্তু গত চার দিনেও রেল পুলিশের পক্ষে কোনো ব্যবস্থা নিয়ে অবরোধ তোলা যায়নি।