জাঠ আন্দোলনে রণক্ষেত্র ভারতের হরিয়ানা
ভারতের জাঠ সম্প্রদায়ের আন্দোলনে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে দেশটির বিজেপি শাসিত হরিয়ানা রাজ্য। সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের দাবিতে এই আন্দোলন চলছে। দেশটির অন্যান্য অঞ্চলেও এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।
এই আন্দোলনে গত কয়েকদিনে হরিয়ানায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬০ জনের বেশি। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২৩ জন।
হরিয়ানার অর্থমন্ত্রীর বাড়ি ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। পুলিশের মহাপরিদর্শকের বাড়িতে পাথর ছুড়েছে বিক্ষোভকারীরা।
উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে আজ শনিবার সকাল থেকে আরো সহিংস হয়ে উঠেছে বিক্ষোভকারীরা। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে হরিয়ানার ১১টি জেলায়। জিন্দের বুদ্ধখেরা রেলস্টেশনে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। আগুনে নষ্ট হয়ে গেছে সিগন্যাল প্যানেল। ফলে ব্যাহত হচ্ছে রেল পরিষেবা।
হরিয়ানার বিভিন্ন স্টেশনেও শুরু হয়েছে অবরোধ। এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে ১৫০টি ট্রেনের যাত্রা। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে হরিয়ানা রোডওয়ের একটি বাসে।
হরিয়ানার মধ্যে দিয়ে যাওয়া ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বিক্ষোভকারীরা। অবরোধের জেরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। বন্ধ হয়ে পড়েছে রোহতক, জিন্দ, ভিওয়ানি ও হরিয়ানার অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ।
দিল্লির লাগোয়া গুরগাঁও, সিরসাসহ সংলগ্ন এলাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল-কলেজ। আর শনিবার বিক্ষোভের জেরে স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করেছে হরিয়ানা সরকার।
হরিয়ানার বেশ কয়েকটি জেলায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। আন্দোলনকারীরা হরিয়ানার মুনক ক্যানেলের অদিসে চড়াও হওয়ায় ব্যাহত হয়েছে পানি সরবরাহ। এই ক্যানাল দিয়েই পানি সরবরাহ হয় নয়াদিল্লিতে। ফলে আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হলে রাজধানী দিল্লির পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুক্রবার রাত থেকেই হরিয়ানার রোহতক ও ভিওয়ানিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রয়োজনে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে হরিয়ানার নয়টি জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। বিভিন্ন স্থানে চলছে সেনাবাহিনীর ফ্লাগমার্চ।
উত্তাল এই পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আন্দোলনকারীদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভুপিন্দর সিং হুডা। জাঠ আন্দোলনের জেরে সংরক্ষণ বিল আনার আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার।
জাঠ আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে দিল্লিতেও। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আন্দোলনকারীদের সমর্থনে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি জাঠ সম্প্রদায়কে অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) আওতাভুক্ত করে বিশেষ সুবিধা দেওয়া ও রোজগারের ভিত্তিতে আলাদাভাবে আরো ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয় হরিয়ানা সরকার। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। ওবিসি কমিশনের দায়ের করা মামলায় জাঠদের কোটা সংরক্ষণের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আর জাঠদের আর্থিক সুবিধা সংরক্ষণের ওপর স্থগিতাদেশও জারি করেন হাইকোর্ট। এতে প্রতিবাদে জ্বলে উঠেছে জাঠরা।