শরিয়া অনুযায়ী শাস্তি আল্লাহর ক্ষমা : সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল আশায়খ বলেছেন, শরিয়া অনুযায়ী শাস্তি আল্লাহর ক্ষমা। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর রিয়াদে ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহ মসজিদে নিয়মিত ধর্মোপদেশের বক্তৃতায় এ কথা বলেছেন তিনি।
ইমাম তুর্কি মসজিদে শুক্রবারের ধর্মীয় বক্তৃতায় গ্র্যান্ড মুফতি ও সৌদি জ্যেষ্ঠ ওলামা বোর্ডের চেয়ারম্যান শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বলেন, ‘ইসলামী শরিয়ামতে বিভিন্ন অপরাধে দেওয়া শাস্তি হলো আল্লাহর ক্ষমা, এটাকে কোনোভাবেই প্রতিশোধের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না।’
সৌদি প্রেস এজেন্সির বরাত দিয়ে গালফ নিউজ জানায়, শুক্রবারের ধর্মীয় বক্তৃতাদানকালে গ্র্যান্ড মুফতি প্রথমেই সমাজকে অপরাধ ও অনিয়ম থেকে দূরে রাখতে ইসলামের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বলেন, ‘ইসলাম আকিদাহ (বিশ্বাস) রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। আর এই আকিদাহর পাঁচটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করেই ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা জীবনযাপন করে।’
‘আর ইসলাম ধর্মের এই বিশ্বাস অনুযায়ী অপরাধ মোকাবিলা ও প্রতিকার দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এক. ধর্মীয় শিক্ষায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে অপরাধ মোকাবিলা করা এবং দুই. সৎ আচরণের মাধ্যমে মানুষকে পবিত্র আচরণের পথে নিয়ে যাওয়া’ – উল্লেখ করেন শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ। গ্র্যান্ড মুফতি বলেন, ‘পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ মানুষকে ভালো কাজ করার এবং সুপথে থাকার প্রেরণা জোগায়। আর এসবই মানুষকে খারাপ পথে চালিত হওয়া থেকে বিরত রাখে এবং মনে করিয়ে দেয় খারাপ কাজ করলে শাস্তি অপেক্ষা করছে।’
সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের কথা উল্লেখ করে গ্র্যান্ড মুফতি বলেন, ‘মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের ধর্ম, সম্পদ ও সম্মান রক্ষার্থে সর্বোচ্চ অপরাধীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির বিধান রেখেছেন।’ মহানবীর (স.) বাণীর কথা উল্লেখ করে আল আশায়খ বলেন, ‘চল্লিশ বছর বৃষ্টিহীন থাকার চেয়ে পৃথিবীতে শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করা উত্তম।’
সৌদি গেজেট জানিয়েছে, সম্প্রতি সৌদি আরবে শিয়া নেতা নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জেরে আরব দুনিয়ায় বিশেষ করে শিয়াদের মাঝে সৃষ্ট অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করলেন গ্র্যান্ড মুফতি। গত সপ্তাহে সৌদি আরবে শিয়াদের নেতা নিমর আল নিমরসহ ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব। যার বেশির ভাগই ছিলেন সুন্নি মুসলিম।
নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর সৃষ্ট অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবের দেশটির উপযুবরাজ ও ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনকে বলেছিলেন, ‘আদালত শিয়া-সুন্নি দেখে বিচার করে না। আদালতে বিচার হয় অপরাধের। আর অপরাধের কাছে কাছে শিয়া-সুন্নির পার্থক্য নেই। বিচারক এবং কাউন্সিল অভিযোগ, অপরাধ, বিচার প্রক্রিয়া বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার পর রায় দেন।’
এদিকে গত শনিবার শিয়া নেতা নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে ইরানসহ শিয়া ধর্মাবলম্বী প্রধান দেশগুলো। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ করে শিয়ারা। এ সময় তেহরানে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে হামলার ঘটনাও ঘটে। এ হামলার ঘটনার রেশ ধরে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন এবং দেশটি থেকে কূটনীতিকদের ফিরিয়ে আনে সৌদি আরব।
সৌদি আরবের এ ঘোষণার পর ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় বাহরাইন, সুদান, কুয়েত ও কাতার। এ ছাড়া সম্পর্ক হ্রাস করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান ও জিবুতি।
এদিকে চলমান টানাপড়েনের মাঝেই গত বৃহস্পতিবার ইরান অভিযোগ করে, ইয়েমেনের সানায় তাদের দূতাবাসে বিমান হামলা চালিয়েছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায় দেশটি।