প্রয়াত সৌদি বাদশাহর ‘গোপন স্ত্রী’ পেলেন ক্ষতিপূরণ
সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের ‘গোপন স্ত্রী’কে বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে রাজপরিবার। স্ত্রী দাবিকারীর নাম জানান হার্ব। আজ বুধবার তাঁকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দেন বাদশাহ ফাহাদের ছেলে যুবরাজ আবদুল আজিজ। যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই নারীকে ২০ মিলিয়ন পাউন্ড বা ২৪০ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালতের বিচারক পিটার স্মিথ আইনি খরচ হিসেবে ওই নারীকে আরো ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, আদালতের শুনানিতে হার্বের দাবির বিরোধিতা করতে উপস্থিত ছিলেন না যুবরাজ আবদুল আজিজ। হার্ব ১২ মিলিয়ন পাউন্ড দাবি করেছিলেন। এর সুদ ৩ দশমিক ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড যোগ হয়ে তা দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন বা ১৮০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে হার্বের নামে প্রায় ৬০ কোটি টাকা মূল্যের দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট লিখে দিতে চেয়েছেন যুবরাজ। সব মিলে যুবরাজের কাছ থেকে হার্ব পাচ্ছেন ২৪০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ।
৬৮ বছর বয়সী হার্বের দাবি, ২০০৩ সালের একটি চুক্তি অনুযায়ী এ বছরের জুলাই মাসের মধ্যেই দুটি ফ্ল্যাটসহ তাঁর দাবি করা অর্থ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুবরাজ তা দিতে ব্যর্থ হন। ফলে আদালতের দারস্থ হতে হয় তাঁকে।
শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় হার্ব বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। আমার ১২ বছরের দুর্দশা দূর হলো। এ ছাড়া ব্রিটিশ বিচারব্যবস্থার ওপরও আমি ভীষণ খুশি। এই রায় দেওয়া না হলে তারা আমাকে সৌদি আরবে নিয়ে যেত এবং পাথর ছুড়ে হত্যা করত।’
শুনানি থেকে জানা যায়, প্রয়াত বাদশাহ তাঁর জীবদ্দশায় হার্বের জন্য একটি নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে বিয়ের পর প্রয়াত বাদশাহ তাঁর নামে ২৫ হাজার পাউন্ড বা ৩০ লাখ টাকা দিয়ে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন। যেখান থেকেই তাঁর ব্যয় নির্বাহ হতো।
এরপর ১৯৭৪ সালে লেবাননের এক আইনজীবীকে বিয়ে করেন হার্ব। এই সংসারে দুটি মেয়েও জন্ম নেয় তাঁর। তবে তিনি দাবি করেন, এই বিয়ের পরেও সৌদি বাদশাহ তাঁকে সহায়তা করতে নিয়মিত অর্থ দিতেন। সেই সঙ্গে চেলসিয়াতে একটি ফ্ল্যাটও কিনে দিয়েছিলেন বাদশাহ।
আদালত বলেন, প্রয়াত সৌদি বাদশাহর সমর্থনেই একটি বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন হার্ব। যদিও হার্বের হাজির করা প্রমাণগুলো তেমন শক্ত নয় বা বিয়ের সময়ের তথ্য নিয়ে কিছুটা বিভ্রাট রয়েছে, তবু আদালত মনে করছেন যে হার্ব সত্য কথা বলছেন। ২০০৩ সালে যুবরাজের সঙ্গে হওয়া তাঁর চুক্তির বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই বোঝা যায় যে তিনি সত্য বলছেন।
অর্থ দেওয়া না হলে প্রয়াত বাদশাহর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের সব গোপন কথা ফাঁস করে দিয়ে দুটি বই প্রকাশের হুমকি দিয়েছিলেন হার্ব।
বর্তমানে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাওয়া ফিলিস্তিনের নাগরিক হার্ব দাবি করেন যে, ১৯৭০ সালে তাঁকে সৌদি আরব ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তবে ১৯৮২ সালে বাদশাহ ফাহাদের রাজ্য অভিষেকের পরেও তাঁদের সম্পর্ক চলমান ছিল। যতদিন জানান হার্ব বেঁচে থাকবেন, ততদিন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও অঙ্গীকার করেছিলেন বাদশাহ।
২০০৫ সালে ৮২ বছর বয়সে বাদশাহ ফাহাদ মারা যান। তবে এর দুই বছর আগে ২০০৩ সালে লন্ডনের একটি হোটেলে বসে যুবরাজ আবদুল আজিজ তাঁর বাবার অঙ্গীকারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হার্বকে ১৪৪ কোটি টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। হার্ব জানান, এর পর থেকে বাদশাহর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিভিন্ন কথা তিনি গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
এই অর্থপ্রাপ্তি সম্পর্কে জানান হার্ব বলেন, ‘১২ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১৪৪ কোটি টাকার পরিমাণের অর্থ প্রতি সপ্তাহে রাজপরিবারের কাপড় ধোয়ার বিল হিসেবেই খরচ হয়। এটা তাদের অর্থ নয়। আমি এই অর্থের জন্য কাজ করেছি। যদি তারা এটা না দিত, তাহলে আমাদের সম্পর্কের সব গোপন কথা লিখে আমি বই প্রকাশ করতাম।’