‘আমি গরুর মাংস খেয়েছি, আসো মারো আমাকে’
ভারতের উত্তরপ্রদেশে ফ্রিজে গরুর মাংস রাখা এবং খাওয়ার গুজবে ৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ আখলাককে পিটিয়ে হত্যার পর ভারতজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নির্মম ওই ঘটনার পর পরীক্ষাগারে প্রমাণ পাওয়া গেছে, নিহতের ফ্রিজে গরুর মাংস নয়, ছিল খাসির মাংস!
ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার ভারতের বিখ্যাত ঔপন্যাসিক শোভা দে এই ঘটনার প্রতিবাদে একটি টুইট করেন। তিনি লেখেন, ‘আমি মাত্র গরুর মাংস খেয়েছি। আসো, মারো আমাকে।’ তাঁর এই টুইটের পর আরো আট হাজার মানুষ একই বক্তব্য দিয়ে রিটুইট করে।
এ ছাড়া গরুর মাংস খাওয়ার ‘গুজবে’ এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন ভারতসহ বিশ্বের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রতিবাদ জানিয়েছেন সরকারি ও বিরোধীদলীয় নেতারাও।
কংগ্রেস মুখপাত্র শাকিল আহমেদ বলেন, ‘দেশে হাজারো সমস্যা ফেলে মোদি সরকার ব্যস্ত ছিল গোরক্ষা নিয়ে। আর এর জন্য মরতে হলো বৃদ্ধ মোহাম্মদ আখলাক। এই হত্যার দায় অবশ্যই মোদি সরকারকে নিতে হবে।’
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, ‘একদিকে আমাদের মহাকাশযান মঙ্গলে যাচ্ছে। আরেকদিকে আমাদের জনতা গরু বাঁচাতে গিয়ে মানুষ মারছে। সভ্যতার এমন বৈপরীত্য কেবল ভারতেই সম্ভব।’
ভারতের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সানওয়ার লাল জাট লেখেন, ‘এই লজ্জা আমাদের। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে আমাদের সবাইকে নিয়েই। তবে যে উদাহরণ দেখানো হলো, এর জন্য আমরা লজ্জিত।’
আম আদমি দলের প্রধান ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইট করেন, ‘গরুর মাংস খাওয়ার গুজবে একজনকে মেরে ফেলা হলো। খবরটি শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। কী হয়েছে আমাদের সমাজের!’
আম আদমি দলের মুখপাত্র শেখর গুপ্ত লেখেন, ‘কুসংস্কার সমাজের কত গভীরে ঢুকে গেছে এটা তাঁর প্রমাণ। কুসংস্কারকে আঁকড়ে ধরে সমাজ বেশিদূর এগোতে পারে না।’
ভারতীয় প্রেস কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কেন্ডেয় কাটজুও টুইট বার্তায় লেখেন, তিনি আগেও গরু খেয়েছেন, ভবিষ্যতেও খাবেন। বরং এখন থেকে আরো বেশি করে খাবেন। হিম্মত থাকলে এ বিষয়টি নিয়ে কেউ তাঁর সামনে এসে মেরে দেখাক। তবে ওই ‘কাপুরুষদের’ জন্য তাঁর হাতের লাঠি অপেক্ষা করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
স্বনামধন্য সাংবাদিক বরখা দত্ত লিখেছেন, ‘এই আমাদের সংস্কৃতি এবং জাতীয়তাবাদের চেতনাবোধ? বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তার বাবাকে কেবল গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে মেরে ফেলা হলো!’
নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ডে বলিউড অঙ্গনেও উঠেছে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড়। অভিনেতা নানা পাটেকর একে ‘সভ্যতা ও জাতীয়তাবাদের প্রতি অবমাননা’ বলে উল্লেখ করেন।
আরেক বলিউড অভিনেতা ঋষি কাপুর টুইট করেছেন, ‘আমি গরুর মাংস খাই এবং এর সঙ্গে আমার ধর্মীয় কোনো দণ্ড নেই। আমি এখনো আমার ধর্মের প্রতি আস্থাবান।’
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ভারতের প্রশাসনও। উত্তরপ্রদেশের প্রধান স্বরাষ্ট্রসচিব দেবাশিষ পান্ডার বক্তব্য, ‘এটি কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়। সর্বোচ্চ এবং কঠোরতম আইনে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কখনো এমন ঘটনা না ঘটে।’
ঘটনাস্থল নয়ডার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এন পি সিং বলেছেন, ‘আমরা মোহাম্মদ আখলাকের ফ্রিজে পাওয়া মাংস পরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিয়েছিলাম। আমরা সেখান থেকেই জানতে পেরেছি যে সেগুলো মোটেও গরুর মাংস ছিল না ।’ তবে তিনি এ কথাও জানান যে হত্যাকারীদের সঙ্গে কট্টরপন্থী কোনো হিন্দুত্ববাদী সংস্থারও সংযোগ নেই।