জাকারবার্গকে হাত ধোয়ার সামগ্রী পাঠানোর ধুম!
বিষয়টা সাদাচোখে তেমন কিছুই না। যুক্তরাষ্ট্র সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা হলে তাঁর সাথে হাত মিলিয়েছিলেন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। কিন্তু গোলটা বাঁধল হাত মেলানোর ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রকাশের পর।
হাত মেলানোর ছবি দেখে কারো কারো মনে পড়ে গেল ভারতের গুজরাটে ২০০২ সালে ঘটে যাওয়া হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার কথা। সেই সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এই দাঙ্গা ও হত্যার ঘটনা মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগকেই স্মরণ করিয়ে দিয়ে ‘অ্যালায়েন্স ফর জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকিউরেসি (এজেএ)’ নামের একটি সংগঠন বলছে, মোদির হাতে লেগে রয়েছে নিষ্পাপ-নিরীহ সাধারণ মুসলমানদের রক্ত।
ওই ‘রক্তমাখা’ হাতের সঙ্গে হাত মেলানোয় জাকারবার্গের হাতেও রক্ত লেগেছে বলে দাবি সংগঠনটির। জাকারবার্গের হাত পরিষ্কার করতে তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত জীবাণুমুক্তকরণের তরল পাঠিয়েছেন তাঁরা। এক দুই বোতল না, আড়াইশো বোতলের বেশি স্যানিটাইজার পার্সেল করে পাঠানো হয়েছে জাকারবার্গের বাড়িতে। আর প্রতিটি বোতলের গায়ে লেখা আছে গুজরাট দাঙ্গায় নিহত একজন ব্যক্তির নাম। পার্সেলের সঙ্গে নিজেদের কথাও যুক্ত করে দিয়েছেন এজেএর সদস্যরা। সেখানে তারা লিখেছেন, ‘প্রিয় জার্ক, দয়া করে হাত ধুয়ে ফেল।’
শুধু কি স্যানিটাইজার পাঠানো? টাইমস অব ইন্ডয়া ও জি নিউজ জানিয়েছে, জাকারবার্গকে হাত ধোয়ার অনুরোধ করে একটা ওয়েবসাইটও খোলা হয়েছে এজেএর পক্ষ থেকে। www.zuckwashyourhands.com ঠিকানার ওই ওয়েবসাইটে রক্তের দাগ মুছতে হাত ধোয়ার জন্য ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কী আছে ওয়েবসাইটে?
zuckwashyourhands.com ঠিকানায় প্রবেশ করলেই আপনি দেখবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি। এর নিচে মোদি সম্পর্কে লেখা রয়েছে, ‘পরিচয় করিয়ে দেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। গণহত্যার দায়ে কিছুদিন আগেও যার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে তিনি এখন আমাদের এটা বিশ্বাস করাতে পেরেছেন যে তাঁর হাত পরিষ্কার।’
এর পরই একটি রক্তমাখা হাতের ছাপ। ছবির বর্ণনায় লেখা, ‘কিন্তু আমরা সবাই জানি তাঁর হাতে কী পরিমাণ রক্ত লেগে আছে।’
এবার রয়েছে মোদি আর জাকারবার্গের করমর্দন করার সেই বিখ্যাত ছবিটি। গত রোববার ফেসবুক কার্যালয়ে মোদির সফরের সময় যেটি তোলা হয়। ছবির বর্ণনা দিয়ে তার নিচে এজেএ লিখেছে, ‘জাক, তোমার পুরো হাতে রক্ত মেখ না।’
এরপর রয়েছে পিউরেল নামের একটি স্যানিটাইজারের ছবি। এই ছবির নিচে লেখা হয়েছে, ‘পিউরেল হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাঠিয়ে জাককে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’
ওয়েবসাইটের নিচের দিকে নামলে দেখা যায়, আরো কিছু স্যানিটাইজারের বোতল রয়েছে। সেখানে লেখা, ‘কিন্তু সেখানে পরিষ্কার করার জন্য অনেক বেশি রক্ত রয়েছে। তাই আমাদের আরো বেশি পরিমাণ স্যানিটাইজার পাঠাতে হবে। ’
এরপর আরো বেশি পরিমাণ বোতলের ছবি দিয়ে নিচে লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘যে পরিমাণ ধর্ষণ ও মৃত্যুর জন্য মোদি দায়ী তার তুলনায় এ অল্প হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল যথেষ্ট নয়। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা যতগুলো পাব ততগুলো স্যানিটাইজার পাঠাব।’
মার্ক জাকারবার্গের বাড়ির ঠিকানা লেখা পার্সেলের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘প্রিয় জাক, আমরা আশা করি পিউরেলগুলো সময়মতো তোমার কাছে পৌঁছেছে।’
রোববার ফেসবুকের কার্যালয়ে দেড় ঘণ্টাও বেশি সময় কাটান নরেন্দ্র মোদি। এ সফরকালে মোদি ফেসবুকের সত্যিকারের ওয়ালে (ফেসবুক কার্যালয়ের দেয়াল) ইংরেজিতে লেখন- ‘অহিংসা পরম ধর্ম’।