দেশপ্রেমের প্রমাণ দিয়েও হায়দারের নাম নেই নাগরিকপঞ্জিতে
ভারতে দেশভক্তির প্রমাণ দিয়েও নাম উঠলো না জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে। বুক সমান পানিতে দাঁড়িয়ে ভারতের তেরঙ্গা পতাকা তোলা হায়দার আলির নাম ওঠেনি আসামের নাগরিকপঞ্জিতে। গত বছরের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তলাগোয়া আসামের ধুবড়ি জেলার ফকিরগঞ্জের নস্করা প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে বুক সমান পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে ভারতের জাতীয় পতাকা তুলেছিলো দুই খুদে পড়ুয়া হায়দার আলি খান (৯) ও জইরুল আলি খান (১০)। সেই সময় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আসামের বিস্তীর্ণ এলাকা তখন বন্যার কবলে। চারিদিকে পানি থৈ থৈ। কোথাও কোমর সমান পানি তো কোথাও বুক সমান পানি। স্কুল ঘরও পানির তলায়। সেই অবস্থার মধ্যেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাজেম শিকদার সিদ্ধান্ত নেন স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা তোলা হবে স্কুলে। সেই মতো স্কুলের দুই খুদে শিক্ষার্থী হায়দার আলি খান ও জইরুল আলি খানকে সঙ্গে নিয়ে পানি পেরিয়ে স্কুলে পৌঁছান তিনি। এরপর বুক সমান পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে দুই খুদে শিক্ষার্থী ও স্কুলের সহকারী শিক্ষক নৃপেন রাভাকে নিয়ে স্কুল চত্বরে ভারতের তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। এরপর জাতীয় পতাকার দিকে তাকিয়ে স্যালুটও দেন তারা। ওই সময় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুলের অপর দুই শিক্ষক মিজানুর রহমান ও জয়দেব রায়ের মোবাইল ফোনের দৈলতে সেই ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। যা দেশভক্তির ছবি হিসাবে ভাইরাল হয়ে পড়ে সারা ভারতে। ওই ঘটনার এক বছর পর সেই খুদে পড়ুয়া হায়দার আলি খানের নামই উঠলো না অসমে সদ্য প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকায়।
গত ৩০ জুলাই আসামে প্রকাশিত জাতীয় খসড়া তালিকা অনুযায়ী ৩ দশমিক ২৯ কোটি আবেদনকারীর মধ্যে চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয় ২ দশমিক ৮৯ কোটি মানুষের নাম। ওই তালিকা থেকে বাদ পড়ে প্রায় ৮০ লাখ মানুষের নাম। সেই নাম বাদ পড়া তালিকাতে রয়েছে হায়দার আলির নামও। যদিও হায়দারের সঙ্গী জইরুল আলি খান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাজেম শিকদার এবং সহকারী শিক্ষক নৃপেন রাভা প্রত্যেকেরই নাম উঠেছে নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া তালিকায়। খসড়া তালিকায় অবশ্য নাম উঠেছে ফকিরগঞ্জের বড়খালিয়া-নস্করা গ্রামের বাসিন্দা হায়দার আলির মা জয়গন খাতুন, হায়দারের ১২ বছর বয়েসী ভাই ও ৬ বছর বয়সী বোনের নামও। এমনকি হায়দারের ঠাকুরদা আলম খানের নামও রয়েছে ওই তালিকায়। তবে হায়দারের মৃত বাবা রুপনাল খানের নাম আর হায়দারের নামটাই ওঠেনি নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকায়।
এই বিষয়ে কিশোর হায়দার বলে, ‘আমি জাতীয় নাগরিকপঞ্জি সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমাদের গ্রামের গুরুজনেরা যা বলেই সেই মতোই কাজ করি। তবে গত বছর ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন বুক সমান পানির ভিতর দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা তোলা প্রসঙ্গে সে জানায়, সেদিন সবকিছুই পানির তলায় ছিলো। স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরা সাঁতার কেটে স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছিলো। কিন্ত আমি আর জাইরুল দুইজনে সাঁতার কেটে স্কুলে পতাকা উত্তোলনের জায়গায় চলে যাই। তারপর সেখানে বুক সমান পানিতে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা তোলার পর আমরা পতাকাকে স্যালুট করি।’
হায়দারের নাম নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়ায় হতাশ স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাজেম শিকদার। তিনি জানান, হায়দারের মাসহ সমস্ত গ্রামবাসীরাই চায় হায়দারের নাম যেন নাগরিকপঞ্জিতে ওঠে।
হায়দারের প্রতিবেশী তথা স্থানীয় একটি কলেজের অধ্যাপক কলিমুদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘হায়দার প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও ভারতীয়। তাই আমরা আশা করবো নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকায় হায়দারের নাম উঠবে। এরই মধ্যে হায়দারের মা স্থানীয় এনআরসি সেবাকেন্দ্রে গিয়ে ছেলের নাম নাগরিকপঞ্জিতে তোলার জন্য ফের নির্ধারীত ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছেন। এখন দেখার হায়দারের নাম চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জীতে ওঠে কি না।’