ভূত আতঙ্কে ভুগছে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল
ভূতের ভয়ে তটস্থ স্কুলের ছাত্রীরা। ফাঁকা পেলেই নাকি ভূত ছাত্রীদের ঘাড়ে চেপে বসছে! এর পর পরই জ্ঞান হারায় সেই ছাত্রী। হাত পা ছুড়ে চলে আস্বাভাবিক আচরণ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মেদিনীপুর জেলার শালবনী ধান্যশোলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় প্রতিদিনই কয়েকজন ছাত্রীর ঘাড়ে ভূত চেপে বসছে। এমনকি স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময়েও এমন ঘটনা ঘটছে। একই সঙ্গে পাঁচ থেকে ছয়জনের ওপর ভূত চেপে বসেছে। এতেই অভিভাবক ও শিক্ষকদের বদ্ধমূল ধারণা, একটা বা দুটো ভূত নয়, নির্ঘাত এক দঙ্গল ভূতের বাস রয়েছে ওই স্কুলে।
গত শনিবারই স্কুল চলাকালে ছয়জন ছাত্রীর ঘাড়ে চেপে বসে ভূতের দল। ঘটনার পর পরই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় মেদিনীপুর হাসপাতালে।
শালবনীর আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাজুড়ে একটি মাত্রই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। গোটা অঞ্চল আজও অন্ধ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। গত বছর এই অঞ্চলের কয়েকজন নারীকে ডাইনি সন্দেহে মারধর করে বাড়িছাড়া করা হয়। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কুসংস্কার তাড়াতে এলাকায় সচেতনতা কর্মসূচি আয়োজন করেও কোনো সুফল পায়নি। ভূত-প্রেত, দৈত্য-ডাইনিতে বিশ্বাসী এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা।
এলাকার আদিবাসীদের বদ্ধমূল ধারণা, স্কুল এবং এর আশপাশেই ভূত রয়েছে। এমনকি স্কুলে যাওয়া-আসার পথেও ভূত গাছের মগডালে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। সুযোগ বুঝেই ঘাড়ে চেপে বসে ছাত্রীদের।
স্থানীয় কিছু ওঁঝার দাবি, শালবনী ধান্যশোলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ভেতরে এবং বাইরে থাকা ভূতদের চরিত্র নাকি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সচরাচর, ভূতরা ভয় দেখায়, মাথায় চাটি মারে, চুল ধরে টানে। কিন্তু এখানকার ভূতরা সেসব পথে হাঁটছে না। এই ভূতরা একেবারে টার্গেট করে ছাত্রীদের ঘাড়ের ওপরেই চেপে বসছে। ওঁঝাদের কথায়, এগুলো নাকি পাজি ও নচ্ছার টাইপের ভূত।
ভূতের এই উপদ্রব আর সহ্য করতে রাজি নন ছাত্রীদের অভিভাবকরা। কয়েক মাস ধরে চলা ভূতের উপদ্রবের কারণে অভিভাবকদের অনেকেই মেয়েদের আর স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুলাইয়ে ভরদুপুরে স্কুল চত্বরে বিকট শব্দে বাজ পড়ে। ওই বাজের আতঙ্কে একসঙ্গে আট ছাত্রী জ্ঞান হারায়। তার পর থেকেই স্কুলে ক্লাস চলাকালে ছাত্রীদের জ্ঞান হারাতে দেখা যাচ্ছে। আবার একই ছাত্রীর একাধিকবার জ্ঞান হারানোর ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি হেলাফেলা করতে পারছে না স্কুল পরিচালনা কমিটি। এরই মধ্যে মেদিনীপুরের জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছে তারা।
এলাকাবাসীরা যতই ভূতের উপদ্রব বলে অভিযোগ তুলুন না কেন, তা কোনোভাবেই আমলে নিতে রাজি নয় জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। এরই মধ্যে ভূতের ভয় কাটানোর জন্য স্কুলে পাঠানো হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের মেডিকেল টিম। সেই সঙ্গে ছাত্রীদের কাউন্সেলিং করানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা জানান, স্কুলে ভূত বলে কিছু নেই। আসলে পুরোটাই ‘প্যানিক অ্যাটাক’। ছাত্রীদের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভয়ের কারণেই ভূত চেপে ধরার ঘটনা ঘটছে।