জয়ের দাবি ইমরানের
প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর পক্ষ থেকে ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগ, বিলম্বে ফলাফল প্রদান, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব আসনের ফলাফল দিতে না পরার মধ্যেই পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে জয়ের দাবি করেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ডন ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার একদিন পর আজ বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ২৭০টি আসনের মধ্যে ১৯৪টি আসনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
ফলাফলে ইমরানের দল ৯৮টি আসন পেয়ে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন ৪৯টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ২৩টি আসন।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই আজ রাজধানী ইসলামাবাদে নির্বাচন পরবর্তী প্রথম ভাষণে ইমরান খান জয়ের দাবি করেন। একটি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে ইমরান খানের বক্তব্য প্রচার করা হয়। এ সময় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ নাকচ করে দেন, পাশাপাশি এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলে তদন্ত সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
ডন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ইমরান খান তাঁর বক্তব্যে পাকিস্তানকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও তুলে ধরেছেন। এ সময় তিনি প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদদের দমন-পীড়ন না করারও আশ্বাস দিয়েছেন।
পিটিআই প্রধান বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমত, আমরা জয় পেয়েছি। ২২ বছর আগে আমি যে ইশতেহার তুলে ধরেছিলাম, আল্লাহ আমাদের তা বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিলেন।’
ইমরান খান বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কেন আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলাম, রাজনীতি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে কিছু দিতে পারবে না। কিন্তু আমি চাই, আমার নেতা কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ যে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলেন পাকিস্তান তা হয়ে উঠুক।’
অনিয়মের দাবি নাকচ করে সাবেক এই ক্রিকেট তারকা পাকিস্তানের এই জাতীয় নির্বাচনকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে নিরপেক্ষ’ বলেও দাবি করেন। বিরোধীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি আপনি মনে করেন যে, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, তাহলে আমরা তদন্তের কথা বলব। এ ব্যাপারে আমরা আপনার পাশে আছি। আমি মনে করি, পাকিস্তানের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন। যদি কোনো দলের এতে সন্দেহ থাকে, তাহলে যেসব আসনের ব্যাপারে অভিযোগ থাকবে, সেগুলো নিয়ে তদন্ত হতে পারে।’
‘মহানবী মদিনায় যে ধরনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেখান থেকে আমরা অনুপ্রেরণা নিতে চাই, যেখানে বিধবা আর শিশুদের প্রতি বিশেষ যন্ত নেওয়া হবে’, যোগ করেন ইমরান। তিনি আরো বলেন, ‘পাকিস্তানের কৃষকরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত পারিশ্রমিক পায় না। আড়াই কোটি শিশু স্কুলের বাইরে। আমাদের নারীরা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। কারণ, আমরা তাদের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবাও দিতে পারি না। আমরা মানুষকে বিশুদ্ধ পানীয় জল দিতে পারি না।’
‘ধনীদের দিয়ে একটি দেশের জীবনযাত্রার মান স্বীকৃত হতে পারে না। গরিবরা কীভাবে জীবনযাপন করে সেটাই বিবেচ্য। ধনীদের দ্বীপ আর গরিব মানুষের সমুদ্র নিয়ে কোনো রাষ্ট্র কখনো উন্নতি করতে পারে না।’
পিটিআইপ্রধান আরো বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান খুবই শক্তিশালী। সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। প্রথমে আমি আমার নিজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করব তারপর আমার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের।’
আগামী দিনগুলোর চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে ইমরান খান আরো বলেন, ‘সামনে আমাদের সুশাসন ও অর্থনৈতিক বিষয়ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের অর্থনীতি এত খারাপ অবস্থায় আর কখনোই আসেনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, এই দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল তারা তাদের কাজটি সঠিকভাবে করেনি।’
দেশে বিনিয়োগ স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে থাকা এই নেতা বলেন, ‘অন্য আরেকটি সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব। আমাদের তরুণদের কোনো কাজ নেই। সুশাসনের ক্ষেত্রে আমরা এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই, যা আগে কখনো হয়নি।’
সব ফলাফল প্রকাশ না হলেও এরই মধ্যে ইমরান খানকে নতুন নেতা হিসেবে অভিনন্দন জানাচ্ছেন অনেকেই। দলটির নেতাকর্মীরা উল্লাস মেতে উঠেছেন।
যদিও পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে হলে ১৩৭ আসনে জয় পেতে হবে যেকোনো দলকে। তা না হলে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করতে হবে।