রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন মিয়ানমারের কারেন নারীরা
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এবং অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের দাবি জানিয়েছে মিয়ানমারের কারেন জাতির নারীরা। এ দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে তাদের সংগঠন কারেন উইমেনস অরগানাইজেশন।
গত সোমবারের ওই বিবৃতিতে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির বিবৃতি বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের যেসব দেশ বর্তমানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা প্রদান করছে, তাদের সেই সহযোগিতা বন্ধে আহ্বান জানাচ্ছি। দেশগুলোর উচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা। আমরা সরকারকেও বলতে চাই, আপনার জনগণের ওপর সেনাবাহিনী যে নির্যাতন চালাচ্ছে সেদিকে দৃষ্টি দিন, নীরব থাকবেন না। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অবরোধের বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।’
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান এবং তাদের চলাফেরার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা তুলে নেওয়ার জন্য রাখাইনের উপদেষ্টা কমিশন ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের প্রতিও আহ্বান জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘এ বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই কাজ করতে হবে এবং সেনাবাহিনীকে এই নির্যাতনের দায় থেকেও মুক্তি দেওয়া চলবে না। আর এটাই সময় রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারে অন্য যেসব জাতিগোষ্ঠী রয়েছে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং এমন এক সরকারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেখানেই সবাই একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।’
এই নিধনযজ্ঞ বন্ধে মিয়ানমারের জনসাধারণের জন্য এটাই উপযুক্ত সময় বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, ‘পিপলস অ্যাসেম্বলি পাইথু, হাউজ অব ন্যাশনালিটিস অ্যামায়েথা লুটা, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও মিয়ানমারের সব জাতিগোষ্ঠীকেই আমরা আহ্বান করছি রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর যে নির্যাতন করছে সেটার নিন্দা জানাতে।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আমরা দেখে আসছি বহু বছর ধরে সামরিক বাহিনী আমাদের সাধারণ জনগণের ওপর সহিংসতা চালিয়ে আসছে। সামরিক বাহিনীর এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম গত কয়েক বছর আমরা শান ও কাচিন রাজ্যে দেখেছি। এই দুই রাজ্যের অনেক বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে দেশের ভেতরেই বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।’
লাখ লাখ রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছে, তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করছে এবং প্রয়োজনে মেরে ফেলছে। রাখাইনের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীও রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চলাচ্ছে, দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের এই গল্প আমাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। অনতিবিলম্বে এই নিধনযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে।’
সেনাক্যাম্পে হামলার অছিলায় গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নিধনযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। জাতিসংঘের হিসাব মতে, এই এক মাসে চার লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।